ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ফটোসেশন কম করেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৫
‘ফটোসেশন কম করেন’

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে করা আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।



মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) এ নিয়ে সরকারের আপিল মামলার নিষ্পত্তি করে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

কিন্তু আইনজীবীর বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর অধিকতর শুনানির জন্য মামলাটি আবার বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় আসে।

বৃহস্পতিবার শুনানিতে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা মামলাটি নিষ্পত্তি করেছি, কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছি। কিন্তু পর্যবেক্ষণে কি আছে তা বলিনি। আপনারা বিস্তরিত কিভাবে বললেন? আমরা মিডিয়ায় আপনাদের ছবিসহ বিস্তারিত দেখতে পেলাম। আপনারা কি রায়ের কোনো অনুলিপি পেয়েছেন?

এ সময় রিটের পক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।

তখন আদালত বলেন, সংক্ষিপ্ত রায়ে চারটি শব্দ উল্লেখ করেছি। এর বাইরে একটি শব্দও উল্লেখ করিনি। আমরা মৌখিক কোনো আদেশও দিইনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

এ সময় আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে।

আদালত বলেন, এরপর থেকে আপনারা যদি জনস্বার্থে কোনো মামলা করেন এবং রায়ের আগেই মিডিয়ায় প্রচার করে দেন, তাহলে ধরে নেবো আপনারা শুধু প্রচারের জন্যই মামলা করেন।

এক পর্যায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ফটোসেশন কম করেন। তাতে দেশের জন্য মঙ্গল হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে কিছুই বলা যাবে না।

তিনি বলেন, কোনো কোনো সময় আমরা সংক্ষিপ্ত আদেশ দেই। তবে যেসব বিষয় অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়ে দেই বলে উল্লেখ করেন আদালত।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী দাঁড়িয়ে আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাইলে আদালত আগামী রোববার (১১ মার্চ) পর্যন্ত অধিকতর শুনানি মুলতবি করেন।

মঙ্গলবারের দেওয়া সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপিল ডিসপোজসড অব উইথ এক্সপাংশন, মোডিফিকেশন, অবজারভেশন, অ্যান্ড ফাইন্ডিংস’।

রায়ের পরে ওই দিন আব্দুর রব চৌধুরী ও আসাদুজ্জামানের মতে, প্রধান বিচারপতি ৪ নম্বর ক্রম থেকে একধাপ ওপরে উঠে স্পিকারের পদমর্যাদায় চলে যাবেন। অপরদিকে জেলা জজরা হবেন সচিবদের সমমর্যাদার।

সূত্রমতে, ১৯৭৫ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে প্রধান বিচারপতি পদমর্যাদাক্রম স্পিকারের সঙ্গে তিন নম্বর ক্রমিকেই ছিলেন। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সেটা পরিবর্তন করে প্রধান বিচারপতিকে চার নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়।

১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে একটি রিট আবেদন দায়ের করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ে ৮টি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশনা অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। মঙ্গলবার এ আপিলের নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।