ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): সন্ধ্যার পর সরগরম টিএসসি এলাকা। চা আর বাদাম মুখে আড্ডা-গল্পে ব্যস্ত সবাই।
ধর! ধর! চিৎকার করে এগিয়েও আসেন কয়েকজন। কিন্তু কোথা থেকে, কে মারল এ ককটেল, কোনো হদিস নেই।
বিএনপির ডাকা টানা অবরোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার প্রতিদিনের চিত্র এটি। শুধু টিএসসিই নয় ভিসি চত্বর, দোয়েল চত্বর, স্বাধীনতা সংগ্রাম চত্বর ও শহীদ মিনার এলাকায় নিয়মিতই ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণের এমন ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পাসে। সে হিসাবে ৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি (শনিবার) পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, সাধারণত সন্ধ্যার পরপরই ঘটছে বেশিরভাগ বিস্ফোরণের ঘটনা। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে ককটেলবাজরা। পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।
গত শুক্রবার (১৬ জনুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কার্জন হলের সামনে একটি রিক্সাকে লক্ষ্য করে হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটে একটি ককটেলের। ওই রিক্সায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরছিলেন সংবাদ সংস্থা ইউএনবির সাংবাদিক তানিয়া মুন। এত তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
ওইদিন রাতে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। আল্লাহকে ধন্যবাদ যে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ঢাবির ৪৯তম সমাবর্তন চলাকালে কলা ভবন থেকে ৫টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। একই দিন সন্ধ্যায় পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে বিস্ফোরণ ঘটে আরও তিনটি ককটেলের।
এর আগের দিন সোমবার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে হাকিম চত্বরে পরপরচারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে রিকশাচালকসহ তিনজন আহত আহত হন।
অব্যাহত ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় চরম আতঙ্কে সময় পার করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনেকে নাশকতার ভয়ে সন্ধ্যার পর বাইরে প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মও করতে পারছেন না। বেশি বিপাকে পড়েছেন ছাত্রীরা।
বিশেষ করে যারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টিউশনি করাতে যান। অনেকেই বাধ্য টিউশনি ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন!
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র লিটু খান বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পর আমরা বন্ধুরা মিলে টিএসসিতে আড্ডা দিই। কিন্তু যেভাবে প্রতিদিন ককটেল বিস্ফোরিত হচ্ছে, তাতে সব সময়ই ভয় কাজ করে। কারণ কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে, বলাতো যায়না!
‘ভয়ে আতঙ্কে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যার পর টিএসসি এলাকায় আসে না। কেউ আবার খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকছে না। ’—বলেন তিনি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদও।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। যা উদ্বেগের বিষয়। তবে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলেন, অনেক সময় ব্যাগে করে ককটেল এনে ছাত্রদের মতো চুপি চুপি ঢুকে পড়ছে। আবার মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত কেটে পড়ছে দুর্বৃত্তরা।
তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রক্টরিয়াল বডি তৎপর রয়েছে বলেও জানান এএম আমজাদ।
তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫