শেরপুর (বগুড়া): বারবার আশ্বাসের পর প্রায় তিন যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আজও নির্মিত হয়নি বগুড়ার শেরপুরে বাঙালি নদী পারাপারের বহু প্রতিক্ষিত সেতুটি। ফলে দিনের পর দিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উভয় পাড়ের শতাধিক গ্রামের মানুষকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিলে গেলেও তা বাস্তবায়ন করেননি। এতে খামারকান্দি ইউনিয়নের বাঙালি নদীর তীরবর্তী মানুষের সেতুর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। আর দিনের পর দিন পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এপারে শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঁঝর ও ওপারে বিলনোথার গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বাঙালি নদী প্রবাহিত।
অন্যদিকে ওপারের ধনুট উপজেলার এলাঙ্গী, কালেরপাড়া, নীমগাছী, চিকাশী, গোসাইবাড়ী ও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। আর এসব গ্রামে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস।
নিত্যদিনই তাদের বাঙালি নদীর ওপর দিয়ে এপারে-ওপারে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের চাটাই হলো এই নদী পারাপারের একমাত্র অবলম্বন।
নদীপাড়ের বাসিন্দা ঝাঁঝর গ্রামের বৃদ্ধ হোসন আলী বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে অনেক রাজনীতিবিদই এলাকায় এসেছেন। ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছেন তারা। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে বরাবরই আমাদের কথা ভুলে গেছেন।
ঝাঁঝর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, ধুনটের চাপড়া গ্রামের অকফের আলীসহ একাধিক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে জানান, বাঙালি নদীর এই স্থানে ব্রিজ না থাকায় পণ্যবহনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে।
এছাড়া এপারে ওপারে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানান তারা।
ঝাঁঝর পঞ্চশক্তি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়ারেছ বাংলানিউজকে জানান, সেতু না থাকায় প্রতিদিনই চাকরিজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ নয় মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ সেতু থাকলে এক মাইল দূরত্বেরও কম হতো।
এদিকে নদী তীরবর্তী গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে পরিবারের সবাইকে বেশ ভাবনায় ফেলে দেয় বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শরিফ।
তিনি বলেন, কারও অসুখ হলে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। কোনো যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অনেক সময় রোগীর দুর্ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাঙালি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে (এলজিইডি) একটি আবেদন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে ২০০০ সালে সেতুর নকশা ও প্রাক্কলন তৈরি করে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় জেলা কার্যালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়।
এরপর উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি (স্মারক নং-১৩/২০০১-০২/১৯৮) প্রয়োজনীয় প্রকল্প নকশা ও ছবি প্রস্তুত করে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি পরিদর্শক দল সেতু নির্মাণস্থলে গিয়ে মাটি পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজ নির্মাণের যাবতীয় কাজ গুটিয়ে আনা হয়েছে। ব্রিজের এপার-ওপারের সিংহভাগ রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে।
নতুন বছরে এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, ঝাঁঝর গ্রামে বাঙালি নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজও শেষ। তাই এ অর্থ বছরের মধ্যেই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫