ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শোকের মাতম সোহাগের বাড়ি

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
শোকের মাতম সোহাগের বাড়ি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: ও দরদী! আমার বাজান কত বড় হয়ছিল! আমার বুকের মানিক অন্ধ মায়ের একমাত্র সম্বল ছিল! বড় আশা করে বুক বাঁধিছিলাম! আমার বাজান আমারে কামাই করে খাওয়াইতেছিল। আমার আর কেউ রইলো না।



এই হরতাল-অবরোধ আমার দরদীদের শেষ করে দিলো। ওর  বাজান চলে গেছে ৭/৮ বছর আগে। আর কোনোদিন ফিরে আসলো না। জানি না বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে। সেই থেকে বুকের ধন-রে নিয়ে বাপের বাড়ি আছি। দুই চোখে দেখি না। কী করে খাবো রে! ও আমার বুকের ধন মানিক রে।

রোববার দুপুরে নগরকান্দা উপজেলা ডাঙ্গি ইউনিয়নের শঙ্করপাশা গ্রামের একমাত্র সন্তানের পুড়ে মরার খবর পেয়ে এমন করেই বাপের বাড়ির উঠানে আহাজারি করছিলেন সোহাগ বিশ্বাসের (১৭) মা সেলিনা বেগম।

অন্ধ মায়ের আহাজারিতে বাড়ির উঠানে এসে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছেন অন্যান্য স্বজনেরাও। প্রিয় স্বজন হারানোর বেদনায় তাদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা। কোনো পাষণ্ডও সন্তান হারানো এমন মায়ের আহাজারি মেনে নিতে পারে না। তারপরও তা বাস্তব!
  
সেলিনা বেগমের একমাত্র ছেলে সোহাগ বিশ্বাস। ট্রাকে হেলপারের কাজ করে মা ও তার নিজের খাবার যোগাতেন। রোববার ভোরে বরিশালে অবরোধকারীদের আগুনে পুড়ে মারা যায় সোহাগ।
 
সোহাগের নানা দলিল উদ্দিন নাতি হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, এ কেমন আন্দোলন! আমি, আমার পরিবারের কেউই তো কোনো দল করিনা। এমন কোনো অপরাধও করি নাই যে, আমার নাতিকে আগুনে পুড়ে মরতে হবে!
 
তিনি বলেন, ওই খালেদা আমার নাতিরে শেষ করে দিলো! ওই খালেদা আর তার লোকজন আমার মেয়ের একমাত্র সম্বলকে পোট্রোল বোমা মেরে গাড়িসহ পোড়াই মারছে। আমি তাদের বিচার চাই।
 
নিহত সোহাগের মামা বাবুল মণ্ডল বললেন, নাশকতা করে, মানুষ খুন করা কোনো আন্দোলন হতি পারে না।

তিনি বলেন, সরকারকে এগুলো বন্ধ করতি হবি। এসব খুনের বিচার করতে হবি।

তিনি জানান, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল থেকে লাশ এসে গ্রামে পৌঁছায়। নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় শঙ্করপাশা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
 
জানা গেছে, শনিবার রাতে পিঁয়াজ নিয়ে ট্রাকে করে ফরিদপুর থেকে বরিশাল গিয়েছিল সোহাগ। সেখান পিঁয়াজ নামিয়ে ফরিদপুরে ফেরার পথে বলিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ও শানুহারের মাঝামাঝি এলাকায় অবরোধ সমর্থকদের  ছুড়ে মারা পেট্রোল বোমায় দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে তাদের ট্রাক। এ সময় জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচান ট্রাকের চালক রিপন।

রিপন বাংলানিউজকে জানান, চোখের সামনের সোহাগ পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। ওকে বাঁচাতে পারিনি। আমিও মারাত্মকভাবে আগুনে পুড়ে গেছি। আগুনের জ্বালা-পোড়া নিয়েই বাড়িতে ফোন দেই।

তিনি বলেন, অনেক পরে স্থানীয়রা তারপর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এরও পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আমি ফরিদপুর হাসপাতালে চলে আসি।

রিপন বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুরুষ সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার গণপতি বিশ্বাস শুভ জানান, রোগীর শরীরের ১২ ভাগ আগুনে পুড়ে গেছে। মুখে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সহজে তার মুখের দাগ যাবে না। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।

জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তা
এদিকে, পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ ট্রাকচালক রিপনকে নগদ পাঁচহাজার টাকা এবং নিহত সোহাগ বিশ্বাসের মা সেলিনা বেগমকে নগদ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫

** বরিশালে পেট্রোল বোমায় ট্রাকের হেলপার নিহত
** হেলপার মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপির ৪ নেতা আটক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।