রাজশাহী: ‘শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তির উন্নয়ন, অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ, সর্বোপরি গভীর দেশপ্রেম জাগ্রত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ও চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে অবদান রাখতে হয়।
রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ মন্তব্য করেন।
তরুণ প্রজন্মকে দেশের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানেও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের এ শতাব্দী আমাদের সামনে যেমন অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তেমনি ছুঁড়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জও। ’
সেই সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত থেকেও নিজস্ব কৃষ্টি আর গৌরবকে সমুন্নত রাখতে হবে। শিক্ষাকে করতে হবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পারে। এ জন্য আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সম্মিলন ও সর্বাধুনিক কারিকুলাম সংযোজন করতে হবে। ’
দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উত্তরণের যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে তা এগিয়ে নিতে ছাত্র সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ষাটের দশকে যে ছাত্র আন্দোলন, তা স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতো। পরে আমরা তা অর্জন করেছি। আজকের আন্দোলন দেশ গড়বার। এ কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে। ’
নতুন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা আজ গ্রাজুয়েট, দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। আজকের এ সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে তেমনি দায়িত্বও অর্পন করছে। সে দায়িত্ব নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। মনে রাখবে, তোমাদের এ পর্যায়ে আনতে সমাজের মেহনতি মানুষের অবদান রয়েছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। অর্জিত জ্ঞান মেধা ও মনন দিয়ে তোমরা দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। ’
এ সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম এবং বিশ্বজনীনতার মতো দৃষ্টিভঙ্গি হৃদয়ে লালন করার জন্য গ্রাজুয়েটদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে দিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর তালাত আহমদ গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের অবশ্যই বৃহত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে সচেতন থাকতে হবে। জ্ঞান ও যোগ্যতাকে অবশ্যই সমাজের কল্যাণ এবং মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বাস্তবসম্মত ইস্যুগুলোতে নিজস্ব জীবনদর্শন ও সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটাতে হবে এবং শুধু জ্ঞানের ক্ষেত্রে নয় বরং কল্যাণকর সব বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে নারী গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে প্রফেসর তালাত আহমদ বলেন, ‘তোমাদের সংগ্রাম ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং কোনোভাবেই লক্ষচ্যুত হওয়া যাবে না। তোমাদের চলার পথে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে কিন্তু তোমরা যদি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকো তাহলে লক্ষ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হতে পারবে। ’
সমাবর্তনে স্বাগত ভাষণ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান।
এর আগে রোববার দুপুর আড়াইটায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে শোভাযাত্রাসহ প্রবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশ করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদের এমফিল, স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্তদের ডিগ্রি প্রদানের জন্য আচার্যের কাছে উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অনুষদের ডিনবৃন্দ। রাষ্ট্রপতি তাদের ডিগ্রি প্রদান ঘোষণা করেন। সমাবর্তনে চার হাজার ৭৭১ জন গ্রাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫