ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে মাঠে যৌথবাহিনী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
রাজশাহীতে চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে মাঠে যৌথবাহিনী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধে প্রায় দিনই রাজশাহীতে রাজপথে পুলিশের ওপর একের পর এক চোরাগোপ্তা হামলা ও যানবাহনে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।

 

এ কয়েকদিনের অবরোধ-হরতালে রাজশাহীতে ৬টি বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দিয়েই সটকে পড়ছে অবরোধ সমর্থকরা। কোনোভাবেই নাশকতাকারীদের ঠেকাতে পারছে না পুলিশ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তার জন্য রাজশাহী সিটি বাইপাস সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নাশকতার কারণ অনুসন্ধান করে আট এলাকায় যৌথবাহিনী নামিয়ে অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা।

এ অবস্থায় উত্তর-পশ্চিমের ২২ জেলায় সোমবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান। রোববার (১৮ জানুয়ারি) দিনগত মধ্যরাত থেকে এ বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের অন্য জেলাগুলোতেও যেকোনো সময় মাঠে নামছে যৌথবাহিনী।

অভিযানে অংশ নিচ্ছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেরিযান (র‌্যাব), পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। অভিযানের প্রধান টার্গেট নাশকতায় জড়িত ও এর মদদদাতাদের শনাক্ত করা। অভিযানের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা তালিকা ধরে যৌথবাহিনী গ্রেফতার চালাবে। সে অনুযায়ী রাজশাহীতে নাশকতাকারী ও এর ইন্ধনদাতাদের তালিকা যৌথবাহিনীর হাতে রয়েছে।

রাজশাহী জেলা ও মহানগর গোয়েন্দা শাখা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর ৫ জানুয়ারি দিনগত রাতে মহানগরীর মতিহারে ফল গবেষণা কেন্দ্রের সামনে একটি ট্রাক ভাংচুর ও সারবাহী অপর একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর পরদিন অর্থাৎ গত ৬ জানুয়ারি দিনগত রাতে পুঠিয়া উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়ায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে কলাগাছ ফেলে ট্রাক আটকে আগুন দেয় মুখোশধারীরা। ১০ জানুয়ারি ভোরে গোদাগাড়ীর কাশিমপুরে মহাসড়কে বরই ভর্তি ট্রাকে আগুন দেয় অবরোধকারীরা।

১১ জানুয়ারি রাতে অবরোধকারীরা যানবাহন চলাচল বন্ধে পুঠিয়ার শিবপুরের মহাসড়কে কাঠের টুকরায় তারকাঁটা লাগিয়ে বিছিয়ে রাখে। খবর পেয়ে পুঠিয়া সার্কেল এএসপি আবু সায়েম প্রধান পুলিশ ফোর্স নিয়ে শিবপুর যান। এ সময় তার গাড়ি লক্ষ্য করে শক্তিশালী ককটেল নিক্ষেপ করে অবরোধকারীরা। ককটেলটি অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাড়ির সামনে বিস্ফোরিত হয়।

একই দিন রাতে মহানগরীর খড়খড়ি বাইপাস সড়কে কীটনাশকের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন ১২ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী বিমানবন্দরের সামনে একটি আলুবোঝাই পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায় অবরোধকারীরা। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মহানগরীর কাজলায় ভটভটি ও চারঘাটে ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
 
রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম জানান, হরতাল-অবরোধে রাজশাহী সিটি বাইপাস সড়ক ও রাজশাহী-নওগাঁ সড়কে বারবার নাশকতার ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই সড়কে গাছ ফেলে পণ্যবাহী ট্রাকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি থেকে পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর থেকে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মহানগরের আম চত্বর-বেলপুকুর পর্যন্ত সড়কটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সড়কের খড়খড়ি, চকপড়া, নারিকেলবাড়িয়া, পারিলা, নতুন বুধপাড়া, উজিরপুর, বামন শিখর, মল্লিকপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত। এখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ দুর্বল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির কর্মীরা কৌশলগতভাবে স্থানীয়দের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

তাছাড়া পুঠিয়া থানা থেকে বাইপাস সড়কের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার এবং বোয়ালিয়া থানা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার ও মতিহার থানা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার। এ সড়কটি রাজপাড়া ও শাহ মখদুম থানা থেকে অনেকটা কাছে হলেও পুলিশ পৌঁছানোর আগেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গাড়িতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যেতে পারছে। সবকিছু বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- জানান ওসি।

এদিকে, চলমান নাশকতা ঠেকাতে রাজশাহীর আটটি এলাকা চিহ্নিত করে যৌথ অভিযানের পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পাঠানো ওই গোয়েন্দা তথ্যে মহানগরীর শালবাগান, হেতেম খাঁ, বিনোদপুর, নওদাপাড়া, কাটাখালী, জেলার চারঘাটের শলুয়া, পবার হরিয়ান ও বায়া এলাকায় বিশেষভাবে যৌথ অভিযান চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা শাখা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, যানবাহনে আগুন দিয়েই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের আটক করা যাচ্ছে না। তবে নিরাপত্তার জন্য বাইপাস সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কারণগুলো চিহ্নিত করে নাশকতা ও চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর কবির জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযান বিভিন্ন সময় চলেছে। তবে বিশেষভাবে জেলার কোথাও সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো অভিযান শুরু হয়নি। কোনো নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসপি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।