ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ভেতরে দেড়শ’, ছাদে একশ’

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
ভেতরে দেড়শ’, ছাদে একশ’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ভেঙে ভেঙে এই বাস ওই বাসে চড়ে টঙ্গী থেকে ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছেন শহীদুল ইসলাম। বয়স চল্লিশের কোটায়।

ইজতেমা ফেরত যাত্রী। যাবেন নেত্রকোণার বারহাট্রা। কাঁধে টুপলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।  

ব্রিজ মোড়ে পরিবহন সঙ্কট না থাকলেও জায়গা না থাকায় চড়তে পারছেন না কোনো বাসে। ঠিক এমন সময় নেত্রকোণাগামী সুমন পরিবহন নামের একটি বাস স্ট্যান্ডে এসে থামলো। চটজলদি ভঙ্গিতে হেল্পার হাঁক দিলেন ‘ভেতরে দেড়শ’, ছাদে একশ’।

ঝুঁকি জেনেও বাসের ছাদে চড়ে বসলেন শহীদুল। সেখানে তার সঙ্গী হলেন অন্তত জনা দশেক ইজতেমা ফেরত মুসল্লি। এ সময় ক্ষীণ কন্ঠে তিনি বললেন, ‘ছোডা (ছোট) গাড়ি দিয়্যা এই পর্যন্ত আইছিলাম। অহন কষ্ট অইলেও এক চান্সে বাড়ি ফিরতে পারমু। এইডাই শান্তি। ’

বাসের হেল্পার টগবগে যুবক সাইদুল বলেন, ‘ভিতরে কয়েকটা সিট খালি আছিলো। অহন জায়গা নাই। সবাই তো বাড়ি ফিরবার চাইতাছে। এইরলেইগ্গা ছাদেও প্যাসেঞ্জার তুলছি। আইজকাই তো ভাড়া মারমু। এরপর তো বিপদ। গাড়ি চলবো ক-না ঠিক নাই। যদি বোমা মারে। ’

চোখে-মুখে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নিয়ে কথাগুলো বলার সময়েই বাসের চালক গাড়ি ছাড়লেন নেত্রকোণার পথে। রোববার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টার ঘটনা এটি। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয় মুসল্লিদের। কনকনে বাতাস তাদের কষ্ট যেন আরো বাড়িয়ে দেয়।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও ময়মনসিংহের ফুলপুর ও হালুয়ঘাটের যানবাহনের চলাচলের একমাত্র পথ শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধের মধ্যেও রোববার রাতে তীব্র যানজটে কোলাহলপূর্ণ ছিল ব্রিজ মোড় এলাকা।

ব্রিজ মোড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায়, মুসল্লিদের খণ্ড খণ্ড কাফেলা। সবার মধ্যে বাড়ি ফেরার তাগাদা। ধর্মপ্রাণ মানুষের এমন ছুটে চলার কাছে হার মানে অবরোধ-তীব্র শীতও। যে যেভাবে পারছেন নিজ নিজ গন্তব্যে ছুঁটছেন।

ভিড় ঠেলে বাসের ছাদে বা ভেতরে উঠার সাধ্য যাদের নেই সেসব মুসল্লিরা ভিড় করছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে। তাদের একজন খেদমত আলী। বাড়ি তারাকান্দার ঢেকিরকান্দা গ্রামে। অটোরিকশায় সিট আছে পাঁচজনের কিন্তু তারা আছেন ছয়জন। এটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো।

এই পরিস্থিতিতে  চালক আলমগীর (৩০) তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘মেলা মানুষ আডবো কীভায়। ’

উত্তরে বয়োবৃদ্ধ খেদমত আলী বললেন, ‘কিচ্ছু করার নাই। সবাই এক লগে আইছি। যামুও একলগে। টুপলাটুপলি লইয়া কোনো মতে বইতে পারলেই অইবো। ১০ টাকা ভাড়া বেশি দিমু। ’

এবার আর না করতে পারলেন না অটোচালক আলমগীর। এতো যাত্রী নিয়ে যাওয়াটা ঝুঁকি কি-না জানতে চাইলে সোজা সাপ্টা জবাব- ‘যাত্রীরা জোরাজুরি করতাছে। আমার কী করার। বেডিংপত্র ভালা কইরা বইতে পারবো না, এরপরেও তারা যাইবো। আমার কোনো সমস্যা নাই। ’

আলমগীরের সঙ্গে আলাপের পর ভোগান্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ইসমাইল হোসেন নামের এক মুসল্লি বলে উঠেন, ‘পথে অনেক জ্যাম। কোনো অবরোধ পাইছি না। গাড়ি-গোড়া ভালাই চলছে। তবে গাড়িত সিট পাওয়া যায় নাই। ’

কষ্ট কইরা এতো দূর আইছি। অহন যেহেতু সিএনজি পাইছি তাই আর চিন্তা নাই’ বলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন ইসমাইল।

পাশেই ময়মনসিংহ থেকে হালুয়াঘাটগামী নীড় এন্টার প্রাইজ নামের এক লোকাল বাসের হেল্পার আব্দুল কাদিরের কন্ঠ ভেসে আসলো। ‘এই তারাকান্দা.., তারাকান্দা। ৩০ ট্যাকা, ৩০ ট্যাকা, উডুইন.., উডুইন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।