ভোলা: চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় ভোলায় সবজির দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। তাছাড়া, ক্ষেতে রোগ ও পোকার আক্রমণ থাকায় উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে।
বাজার মূল্য কম থাকায় চাষীদের উৎপাদন খরচও উঠছেনা। ফলে সবজি চাষে আগ্রহ কমে যাচ্ছে তাদের।
সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে শসা, করলাসহ শীতকালীন সবজির সমারোহ থাকলেও যেন হাসি নেই চাষীদের মুখে। গত মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হলেও বাজার মূল্য চারগুণ কমে গেছে বলে দাবি তাদের।
উৎপাদন খরচ উঠছে না তাদের। তার ওপর আবার নানাবিধ রোগ ও পোকার আক্রমণ। এতে ক্ষেতের ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।
সবজি চাষী আলী আকবর বলেন, ৫ গণ্ডা জমিতে শসা চাষ করেছি, গত বছর প্রতিমণ শসা ৮/৯শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি, কিন্তু এ বছর দাম নেমে গেছে। এ মৌসুমে ব্যাপারিদের কাছে শসা বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি মণ মাত্র ১৮০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা দরে।
কৃষক মোজাম্মেল বলেন, গত বছর ভালো ফলন পাওয়ায় এ মৌসুমে শত শত কৃষক শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করেছে। কিন্তু বাজার দাম কমে যাওয়ায় তাদের সবজি অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে।
লোকামান হোসেন, আব্দুর রব ও শামসুদ্দিন বলেন, সবজিতে পোকার আক্রমণ থাকায় ফলন তেমন ভালো হয়নি, তার ওপর দাম কম। তাই অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
নিজাম উদ্দিন বলেন, সার, ওষুধ ও শ্রমিক মজুরি বেশি থাকার পরও সবজি চাষ করেছি। লাভ তো দূরের কথা, খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত রয়েছি।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ মৌসুমে জেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। এছাড়াও অন্য শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা জানালেন, ক্ষেত পরিচর্যা থেকে শুরু করে উৎপাদন সময় পর্যন্ত এখানকার কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী থাকলেও এখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
২০১৪ সালে বিভিন্ন জেলায় সবজি বিক্রি করেছিলেন তারা। কিন্তু হরতাল ও টানা অবরোধের কারণে বাইরের জেলাতেও সবজি পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে অনেক সবজিই এবার অবিক্রিত থেকে যেতে পারে। বেশিদিন সংরক্ষণ করতে না পারলে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকায় সদরের ইলশা, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, শিবপুর, দক্ষিণ দিঘলদীসহ বিভিন্ন এলাকায় সবজির ভালো ফলন হয়েছে, ফলন দেখে কৃষকদের মুখে হাসি ফটুলেও রোগ ও পোকার আক্রমণ এবং বাজার দাম কমে যাওয়ায় তাদের মুখে হাসি নেই। এনজিও থেকে ঋণ ও ধার দেনা করে অনেকেই সবজি চাষ করেছেন। তারা এখন চরম বিপাকের মধ্যে রয়েছেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, এ বছর সবজির দাম কিছুটা কম, তবে কৃষকরা যাতে ভালো দাম পেতে পারে, সেজন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫