জামালপুর: ভারতের বন বিভাগের বাধার কারণে বকশীগঞ্জের কামালপুর স্থলবন্দরে তিন মাস ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের এলসি করা শত কোটি টাকা আটকা পড়ে রয়েছে।
বন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জের কামালপুর স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশের মোট চাহিদার বড় অংশ সরবরাহ হয় এ বন্দরের পাথর দিয়ে।
প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শতাধিক গাড়ি এ বন্দরের মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে থাকে। এতে করে প্রতিদিন সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। মালামাল লোড-আনলোডিং ও ক্রাশ করতে ৫ সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
স্থলবন্দর ও আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, ভারতের আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা তাদের পাহাড়ে পাথর উত্তোলন বাবদ বন বিভাগের রাজস্ব টাকা জমা দেয়নি। ভারতীয় রাজস্বের টাকা জমা না দেওয়ায় বন বিভাগ পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ায় পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, মোঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে সমতল ভূমিতে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে। তাই সমতলবাসী পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ভারতীয় আদালতে মামলা দায়ের করেন। ফলে ৩ অক্টোবর থেকে কামালপুর স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এতে বন্দরের বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছের তারা।
বন্দরের পাথর ভাঙ্গা শ্রমিক ময়না বেগম, মুক্তা, নাজমা, ইসহাক আলী, নায়েব, হাকিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, গত তিন মাস ধরে ভারত থেকে কোনো পাথর না আসায় বন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে তাদের দিন কাটছে। এ অবস্থায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জামালপুর জেলার একমাত্র কামালপুর স্থলবন্দরটির কার্যক্রম।
স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মোকাদেছ রিপন বাংলানিউজকে জানান, ভারতের বন বিভাগ পাথর উত্তোলনে ছাড়পত্র না দেওয়ায় কামালপুর স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেড় শতাধিক ব্যবসায়ীদের পাথর আমদানি এলসি করা শত কোটি টাকা আটকা পড়ে রয়েছে। বসে বসে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করছেন তারা।
বিষয়টি সমাধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিককরা।
এ প্রসঙ্গে কামালপুর স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহরিয়ার সুজন জানান, বন বিভাগের ছাড়পত্রের জন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ চলছে। ছাড়পত্র পেলেই বন্দরের পরিবেশ আবার সচল হয়ে উঠবে। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে কামালপুর স্থলবন্দর।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন আহাম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, ভারতীয় পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও মামলার কারণে কামালপুর স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে শুনেছি। ১৩-১৫ জানুয়ারিতে ভারতে অনুষ্ঠিত ডিসি-ডিসিএম যৌথ বৈঠকে এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫