ঢাকা: শৈশব থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখে এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার হৃদয়। ছোট থেকেই ঝোঁকও রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভাবনী জিনিসের প্রতি।
এ আগ্রহের কারণে এরইমধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেছে প্রায় ডজন খানেক সার্টিফিকেট। আর এখন এসব সার্টিফিকেট আর দগ্ধ শরীর নিয়ে কাঁতরাচ্ছে হাসপাতালের বেডে।
হাসপাতালে যেতেই অশ্রুসিক্ত মা রোজী রওশন দেখাচ্ছিলেন ছেলের অর্জিত সার্টিফিকেটগুলো।
বললেন, ছেলে আমার বড় হয়ে বুয়েটে পড়তে চায়, স্বপ্ন দেখে বিজ্ঞানী হওয়ার। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার আগেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দোয়া করবেন আমার ছেলে যেন এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে।
আলাপ-চারিতায় জানা যায়, হৃদয় এতটুকুন বয়েসেই ফেনী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান মেলার সিগন্যাল রোবট তৈরি করে পুরষ্কার জিতেছে।
এছাড়া রকেট মডেল মার্কেটিং প্রতিযোগিতা, চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেস, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় অংশ নিয়েছে হৃদয়। প্রতিটি প্রতিযোগিতাতেই পুরস্কার রয়েছে তার।
৫ জানুয়ারি বিকেলে প্রাইভেট শেষে বাসায় ফেরার পথে ফেনীর খেজুর চত্বর মোড়ে ককটেল হামলার শিকার হয় হৃদয়। এরপর থেকেই হাসপাতালে দগ্ধ শরীর নিয়ে যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে সে।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার হৃদয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
বর্তমানে বাম চোখ দিয়ে কম দেখলেও ডান চোখে শুধু আবছা আলো ছাড়া আর কিছুই টাহর করতে পারে না সে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
‘পরীক্ষা আমি দেবোই, ইনশাআল্লাহ’—দৃঢ়তার সঙ্গে বলে হৃদয়।
চার বছর আগে বিদেশ ফেরত বাবা এখন বেকার। সম্প্রতি অনার্স শেষ করে চাকরি খুঁজছেন হৃদয়ের বড়বোন। কিছুদিন আগে বিয়ের কথা-বার্তা চললেও যৌতুক দিতে না পারায় তা ভেঙে যায়।
হৃদয়ের মা জানান, আহত হওয়ার পর হৃদয়কে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতাল, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সবশেষ তাকে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
এই অবরোধে যাতায়াত আর অর্থ সংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না হৃদয়।
মা জানান, আহত হওয়ার পর চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা এসে এক চিকিৎসককে দেখালেও অর্থ সংকটের কারণে এখানে ভালোভাবে ওষুধপত্র কেনা যাচ্ছে না।
‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত সহায়তা পাইনি’—বলেন রোজী রওশন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে সুস্থ করতে সহায়তা দিন। তাকে বিজ্ঞানী বানাতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫