ঢাকা, শনিবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীর গ্রাম ‘মাণ্ডা’

মাহবুব আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
রাজধানীর গ্রাম ‘মাণ্ডা’ ছবি : আনন্দ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর মাণ্ডা (মুগদা) ঘুরে: বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অন্যতম। ইট-পাথরের জঞ্জালে জড়িয়ে রয়েছে পুরো মহানগরী।

এরমধ্যেও রয়েছে গ্রাম!

যেখানে এখনও চাষবাষ হয়, সাত সকালে মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙে বাসিন্দাদের! কেউ বা আবার গরু নিয়ে ছুটেন মাঠে!

এমন দৃশ্য চোখে পড়বে রাজধানীতে। আর তা হলো ঢাকার ‘মাণ্ডা’য়।

কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে এ গ্রামের অবস্থান। সেখান থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে মাণ্ডার আয়তন ০১ দশমিক ৯৫ বর্গকিলোমিটার।

গত আদমশুমারি অনুসারে এখানে প্রায় ৭২হাজারের বেশি মানুষের বাস। রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ ছোট-খাট অন্যান্য কারখানাও।

স্থানীয়রা বলছেন, পাল্লাদিয়ে গত কয়েকবছরে জনসংখ্যা চারগুণ বেড়েছে। সে অনুযায়ী বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। বেশির ভাগ বাড়িতে নেই ঢাকা ওয়াসা ও তিতাস গ্যাসের সেবা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুগদা থানার আওতাভুক্ত এ এলাকায় যোগাযোগ অবকাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে বর্ষাকালে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

এ এলাকার অর্থাৎ মাণ্ডা ব্রিজ থেকে গ্রিন মডেল টাউন পর্যন্ত মূল সড়ক ছাড়া আশপাশের রাস্তাগুলো অজপাড়াগাঁ থেকেও খারাপ। জলাভূমি ভরাট করে প্লট তৈরি করা হলেও সেগুলোতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।

মাণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের নিবাচিত জনপ্রতিনিধি মো. জমশের আলী বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক বছরে এই এলাকায় মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।

কিন্তু সেভাবে ঘরবাড়ি কিংবা ভবন তৈরি হয়নি। তাই কোনো কোনো পাড়ায় বস্তির মতো গিঞ্জি পরিবেশে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।

‘সিটি করপোরেশনের বাইরে হওয়ায় তুলনামূলক বাড়ি ভাড়াও কম। তাই কিছুটা স্বস্তি পেতে নিম্ন আয় থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা এখানেই ভিড় করছেন’—বলেন তিনি।

যোগাযোগ উন্নয়ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে জমশের আলী বলেন, যা বরাদ্দ যা পাই তা দিয়ে এলাকার উন্নয়নের কাজের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মাণ্ডায় কলেজের কার্যক্রমসহ একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল গড়ে উঠলেও তা মানসম্মত নয়। ফলে বাধ্য হয়েই মতিঝিল ও আশপাশের এলাকায় পাঠাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি কিন্ডার গার্টেনের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত পাঁচবছরে লোকসংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। কিন্তু সে অনুযায়ী কোনো উন্নয়ন হয়নি। ঠিক গ্রামের মতোই অবহেলিত হয়ে থাকছে মাণ্ডা।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকার কোথাও পয়ঃনিষ্কাশন, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা স্তুপের কারণে চারদিকে দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। রয়েছে মশার উৎপাতও। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

মাণ্ডা পানির পাম্প এলাকার সোনার বাংলা ভ্যারাইটিজ স্টোরের ব্যবসায়ী সায়েদুর রহমান জানান, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট কাদায় তলিয়ে যায়। এরমধ্যে ফুটপাত দখলের কারণে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করা যাচ্ছে না। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন না।

এদিকে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সিটি করপোরেশনের অধীনে যেতে চান ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দা। তবে পৌরসহ নানা রকম করের বোঝা কারণে করপোরেশনের আওতায় যেতে ইচ্ছুক নন বাড়ি ও জমি মালিকরা।  

মনখা বাজার সংলগ্ন উত্তর মাণ্ডার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আলফাজ আলী বলেন, যেভাবে চলতাছে সেইটাই ভালো। সিটি করপোরেশনের ভিতরে (আওতায়) গেলে খরচাপাতি বহুগুণে বাইরা যাইবো।

এলাকার উন্নয়ন, নাগরিক-সুবিধা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও দালানকোঠা নির্মাণের জন্য ডিসিসির আওতায় যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন একাধিক বাসিন্দা।

পিয়ার আলী গলির বাসিন্দা আবদুর রহমান বেপারী বলেন, যেন ঢাকার মধ্যেই গ্রাম! এক সময় মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছন থেকে মাণ্ডা  পর্যন্ত ছিল বিল-নদী আর খাল। জঙ্গলও ছিল। সন্ধ্যার পর এ দিকে কোনো মানুষ আসতো না ভয়ে।

‘এখন পরিবর্তনের ভিন্ন ধারায় সবই হারিয়ে গেছে। মুগদা-মাণ্ডা এক হলেও করপোরেশনের আওতায় না থাকায় নাগরিক সুবিধা নেই বললেই বলে। ’—যোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

উন্নত নাগরিক সেবা পেতে সিটি করপোরেশনের অধীনে যাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।  

মাণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমাস হোসেন জানান, সরকার থেকে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা দিয়ে সব গ্রামের উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রাজধানীর তেজগাঁও সার্কেলের কাছে তাদের কাজের জবাবদিহি করে থাকেন। মহানগরীর ১৭টি ইউনিয়নের তদারকি সার্কেল কার্যালয়।

তেজগাঁও সার্কেলের কর্মকর্তা শাকিল আহমদ বলেন, নিয়ম অনুসারে এসব ইউনিয়নের দেখভাল সার্কেল কার্যালয় করে থাকে।

তবে এসব ইউনিয়নের জন্য যে উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানালেন তিনি।

বাংলানিউজকে শাকিল আহমদ বলেন, প্রতিবছর নিয়মমাফিক বরাদ্দের বাইরেও ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বেশ কিছু উন্নয়নের কাজ হয়। এ ছাড়া ইউনিয়নের নিজস্ব আয় থেকেও উন্নয়নের কাজ করা হয়।

অনেক সময় বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে এসব এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

** রাজধানীর বুকে সবজি চাষ

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।