ঢাকা, শনিবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

যে কারণে এখনও গুলশান অফিসে খালেদা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
যে কারণে এখনও গুলশান অফিসে খালেদা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খালেদা জিয়ার গুলশান অফিস থেকে: নিজের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ভেঙে রাস্তায় বের হতে চান না বলেই এখনো গুলশান অফিসে অবস্থান করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া। তাছাড়া কৌশলগত কারণেও গুলশান অফিসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।


 
ফলে গুলশান-২ নম্বর সেক্টরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাসায় অবস্থিত নিজের অফিস থেকে সামান্য দূরে ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাসা ‘ফিরোজায়’ যেতে পারছেন না তিনি।
 
এ কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে থাকতে হচ্ছে ছোট্ট একটি অফিস কক্ষে।
 
গুলশান অফিসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করা তার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ঠিক যে কারণে ২০১৩ সালে সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়া হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেখা করতে যাননি, ঠিক একই কারণে গুলশান অফিস থেকে যেতে পারছেন না নিজের বাসায়।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান অফিসে অবস্থানরত তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে প্রেস উইংয়ের সঙ্গে কথা বলেন, থ্যাংক ইউ। ’’
 
পরে প্রেসউইংয়ের প্রধান কর্তাব্যক্তি খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেলকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
 
তবে প্রেস উইংয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, কোনো প্রকার আগাম ঘোষণা ছাড়াই রোববার গভীর রাতে গুলশান অফিস থেকে সব বাধা দূর করার বিষয়টিকে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন খালেদা জিয়া। তাই সরকারের ফাঁদে পা দিতে চান না তিনি। গুলশান অফিসে বসেই চালিয়ে যেতে চান আন্দোলন সংগ্রাম।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা কিছু দিন আগে নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন ‘‘এবার আর বাসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রাজপথে থেকেই গ্রেপ্তার হতে হবে। ’’
 
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার নিশ্চিত জেনেও আত্মগোপনে না থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপার্সনের কথার সম্মান রেখেছন। খালেদা জিয়াও চান নিজের কথার সম্মান রাখতে।  
 
তাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্য অনুসারে শেষ মুহূর্তে এসে যদি তাকেও গ্রেপ্তার করা হয় সেক্ষেত্রে বাসা থেকে গ্রেপ্তার না হয়ে নিজের রাজনৈতিক কাযালয় থেকেই গ্রেপ্তার হতে চান খালেদা জিয়া।
 
অন্য একটি সূত্রমতে, বিএনপির চেয়ারপার্সন মনে করছেন বাসায় ফিরে আবার যদি তিনি বের হতে চান তখনও তাকে অবরুদ্ধ করা হতে পারে। কিন্তু সেখানে অবরুদ্ধ হলে ঘরে বসে দাপ্তরিক কাজ এবং সারাদেশে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
 
দেখা করতে আসা বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশও পাওয়া যায় না নিজের ভাড়া বাসায়।
 
প্রসঙ্গত, গুলশান অফিসের সামনে থেকে পযায়ক্রমে ইট, বালু, পাথর ও সুরকিভর্তি ট্রাক, জলকামান, এপিসি, রায়ট কার, পুলিশভ্যানসহ সব বাধা দূর হওয়ার পরও সেখানেই অবস্থান করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
 
তার কার্যালয়ে সামনে থেকে বাধা দূর হওয়ার আগ পর্যন্ত গত ১৭ দিনে তার সঙ্গে দেখা করতে আসা বিএনপি ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বার বার অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।
 
কিন্তু সব বাধা দূর হবার পরও কেন তিনি কার্যালয়ে অবস্থান করছেন সেটি নিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
 
অবশ্য সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘এটি (গুলশান কার্যাল) আমার অফিস। আমি যখন খুশি তখন বের হবো। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো। বাধা না দিলেই বুঝবো, তারা (সরকার) আমার ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নিয়েছে। ”
 
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি রাত ১১.৪০ মিনিটে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে মূল ফটকে গাড়ি রেখে খালেদার পথে বাধা সৃষ্টি করে পুলিশ।
 
এর পর একে একে সেখানে বাড়ানো হয় পুলিশ সদস্য। কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা হয় কয়েক স্তরের মানবপ্রাচীর। নারী পুলিশ দিয়ে কার্যালয়ের মূল ফটক কর্ডন করে রাখা হয়। আনা হয় পুলিশের বিভিন্ন যান। রাস্তার মাঝামাঝি সেগুলো দাঁড় করিয়ে তৈরি করা হয় দুর্ভেদ্য বেস্টনী।
 
পূর্ব ঘোষিত জনসভায় যোগ দিতে ৫ জানুয়ারি দুপুর ৩ টা ৪৫ মিনিটে নিজ কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। এরই আগেই বেলা ১২টার দিকে কার্যালয়ের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। মহিলা দলের সদস্যরা সেই তালা ভাঙার চেষ্টা করলে তাদের নিবৃত্ত করতে পেপার স্প্রে করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
 
এর প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে কার্যালয়ে ভেতরে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়েই অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
 
এর পর থেকেই কার্যত গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
 
সবশেষ রোববার রাত ২টা ৫০ মিনিটে তার অফিসের সামনে থেকে সব বাধা দূর করা হয়। প্রটোকলের ৬ জন পুলিশ রেখে প্রত্যাহার করা হয় সব পুলিশ সদস্য।
 
বাংলাদেশ সময়:  ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।