ঢাকা: বোমা তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন বলে তাকে ‘বোমারু বাপ্পি’ ডাকতেন নিজ দলের নেতারাও। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তিনি পরিচিত একই বিশেষণে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তার পুরো নাম মাহবুবুর রহমান বাপ্পি। নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত জানান, গাড়ি-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরক আইনে ৫টি মামলা রয়েছে বাপ্পীর বিরুদ্ধে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন তিনি।
স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের খাতায় পলাতক থাকলেও নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিতেন বাপ্পি।
লালবাগে ঢাকেশ্বরী রোডের যে বাড়িটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তার নম্বর ৩১/২। পাঁচ তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্লাটে বোন দুলাভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন বাপ্পি।
বুধবার (জানুয়ারি ২১) দুপুর আড়াইটার দিকে বোমা বিস্ফোরণকালে বাপ্পি ছাড়াও আহত হন আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মোসাম্মৎ হ্যাপি আক্তার (১৩) ও ওই বাসায় বেড়াতে আসা হ্যাপির খালাতো ভাই মো. রিপন (৬)। তাদের শরীর ও হাত-মুখ ঝলসে যায়। পরে সবাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিস্ফোরণের পর বাড়ি ও হাসপাতাল এলাকা থেকে বাসার মালিক আব্দুল কাশেমসহ ১০ জনকে আটক করে লালবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।
ডিবি পুলিশের বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের ইনসপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরক, মোবাইল সেট, পেন ড্রাইভ ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। আলামত অনুযায়ী আমরা নিশ্চিত হয়েছি, বোমা বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে বাপ্পীর বোন ঝুমুর সাংবাদিকদের জানান, রুমে বৈদ্যুতিক হিটার চলছিল। সঙ্গে চার্জ লাইটও চার্জের লাইনে লাগানো ছিল। সেটি আড়াইটার দিকে বিস্ফোরিত হয়ে বাপ্পীর হাতে এসে পড়ে। এতে বাপ্পির কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় ওই দুই শিশু সেখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল।
ঝুমুর আরও জানান, ভাড়া করা বাসাটিতে তাদের সঙ্গে ভাই বাপ্পিও থাকতেন। হ্যাপি তার মেয়ে আর রিপন তার আরেক বোনের ছেলে।
ওই বাসার মালিকের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, একমাস আগে ৮ হাজার টাকায় ২ রুমের বাসাটি ভাড়া নেন আব্দুল হাকিম নামের এক প্রাইভেটকার চালক। তাদের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই মিলে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দ শুনতে পাই।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজউদ্দিন বলেন, বাপ্পী ‘বোমা বাপ্পী’ হিসেবে পরিচিত। তার কাজ ছিল ককটেল ও বোমা বানাতেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নাশকতা চালাতে তিনি এসব বোমা ও ককটেল বানিয়ে সরবরাহ করতেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, বাপ্পীর চোখের অবস্থা খারাপ। তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে হ্যাপির শরীরের ১৯ ও রিপনের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫