মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় র্যাফেল ড্র’তে দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক, সদস্য সচিবসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জেলা দুনীতি দমন আইনে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে জেলা দায়রা ও জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম।
মামলায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন, ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আতাউল হক লাল মিয়া, মেহেরপুর টিভি ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সানোয়ার শহীদ, উল্লাস র্যাফেল ড্র’র মালিক মোবারক হোসেন ও পারভেজ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদী ইয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে মাসব্যাপী মেলায় র্যাফেল ড্র’র নামে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছেন আয়োজকরা। অথচ সরকার প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব, ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে।
ইয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, মেলা চত্বরে বসে ১০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও ৭০টির বেশি দলের মাধ্যমে জেলার সব প্রান্তে ২০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ২০ টাকা দরে লটারি টিকিট বিক্রি করতে হলে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। যেখানে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই আয়োজক কমিটি এ কাজটি করছেন।
এদিকে, লোভনীয় অফারে লটারির টিকেট কিনে জেলার খেটে খাওয়া থেকে শুরু করে সর্বস্তরের লোকজন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে আয়োজকরা যোগসাজোশ করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
বাদী আশা করছেন, বিজ্ঞ বিচারক এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করতে সঠিক রায় দেবেন।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি দুপুর সোয়া ২টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ সম্পদক এমএএস ইমন মেলা বন্ধের দাবিতে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর নাগরিক আবেদন করে একটি ফ্যাক্স বার্তা দিয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, শীতকালীন খেলাধূলা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়ন কাজ বন্ধ রেখে কিছু লোকের লাভের আশায় বাণিজ্য মেলার নামে অসভ্যতা ও জুয়া খেলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
আবেদনপত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা (এসএসসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শহরে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মাইকে লটারি বিক্রির প্রচার হওয়ায় তাদের লেখাপড়া ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এছাড়া বাণিজ্য মেলার নামে নগ্নতা, অশ্লীলতা, জুয়া খেলা জেলাবাসীকে সর্বশান্ত করে ছাড়ছে। তাই মেলা বন্ধ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন ও পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বাংলানিউজকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এমএএস ইমনের নাগরিক আবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লা মতু বলেন, মেলা আয়োজক কমিটির লোকজন শুধু সরকারকেই রাজস্ব, ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন না, তারা আইনমতো পৌরসভার পাঁচ শতাংশ রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। আমি মেলা আয়োজকদের পর পর দু’টি চিঠি দিলেও আমার চিঠির কোনো উত্তর দেননি তারা।
তিনি আরো বলেন, আয়োজক কমিটি লটারির নামে অবৈধভাবে প্রতিদিনই অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাদীর এজাহারটি এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। পৌঁছানোর পর সেটি সম্পর্কে বলতে পারবো।
জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন আরো বলেন, ১০ টাকার লটারির টিকেটের জায়গায় ২০ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের আদেশে কি লেখা রয়েছে তা বিকেলে জানানো হবে। মেহেরপুর পৌরসভার পাঁচ শতাংশ কর পরিশোধ করার জন্য আয়োজক কমিটির সদস্য সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। তাই আমরাও আইনগতভাবেই মোকাবেলা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫