ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সাখাওয়াতকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
সাখাওয়াতকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে সাখাওয়াত হোসেন

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে তার অপরাধের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান খান।  

বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডিস্থ সেফহোমে সাখাওয়াত হোসেনকে সকাল ১০টা থেকে মাঝে দুপুরে এক ঘন্টার বিরতি দিয়ে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।



তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক, এ মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খান, তদন্ত সংস্থার সদস্য নুরুল ইসলাম ও এসএম ইদ্রিস আলী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আব্দুল হান্নান খান বাংলানিউজকে বলেন, সাখাওয়াত হোসেনকে একাত্তর সালের তার অবস্থান এবং তার দ্বারা সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এতে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। যা তদন্ত কাজ অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, একজন অপরাধী কখনোই তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন না। তারপরও তদন্ত কাজের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে তদন্ত কাজ সহজ হয় এবং দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হান্নান খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি যা যা বলেছেন তা তদন্তের স্বার্থে এখনই সব কিছু বলা যাবে না। খুব শিগগিরই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে তার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে বলেও জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান।

সাখাওয়াত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তার আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে রাজধানীর উত্তরখানের মাস্টারপাড়া শাহী মসজিদের কাছে ভাড়া বাসা থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় পলাতক থাকার পর উত্তরখানের রুবিনা ইসলামের মালিকানাধীন ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সাখাওয়াত হোসেন যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত ওমর আলী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে কেশবপুর থানা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। উপজেলার চিংড়া, বগা, ভাণ্ডারখোলা ও গৌরীঘোনা এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করেন তিনি। তার অত্যাচারে এ এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশত্যাগে বাধ্য হন।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে যশোরে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়। ওই বছরের জুন মাসে তাকে কেশবপুর থেকে গ্রেফতারও করা হয়। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।

এর মধ্যে একটি মামলার বাদী একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাখাওয়াতের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেবের পুত্র মশিয়ার রহমান দফাদার।

তিনি জানান, কেশবপুরের এই রাজাকার কমান্ডারের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট তার বাবা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেবকে স্থানীয় মশনিয়া বাওড় থেকে রাজাকার আমিন উদ্দিন ও কসাই গণি ধরে নিয়ে যান।

এরপর কেশবপুর গার্লস স্কুল রাজাকার ক্যাম্পে ৬-৭ দিন আটকে রাখার পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

২০১০ সালে তিনি বাদী হয়ে রাজাকার কমান্ডার সাখাওয়াত, আমিন উদ্দিন ও কসাই গনির নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কেশবপুর থানায় মামলা করেন।

এছাড়া উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আমির আলী সরদারের চার ছেলে কাবিল হোসেন, হাবিল হোসেন, আব্দুল জব্বার, ওয়াজেদ আলী ও পৌত্র জাহান আলী এবং একই গ্রামের খোরশেদ আলী ও রমজান আলীকে পাশ্ববর্তী আগরহাটি গ্রামের রাজাকার কমান্ডার আব্দুল বারী ওদুদীর নেতৃত্বে এক দল রাজাকার ধরে নিয়ে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংলগ্ন ভাঙ্গা ব্রিজের ওপর গুলি করে হত্যা করে।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারুটিয়া গ্রামের কাবিল হোসেনকে হত্যার অভিযোগে তার মেয়ে হামিদা খাতুন রাজাকার কমান্ডার আগরহাটি গ্রামের আব্দুল বারী ওদুদী, শ্রীরামপুর গ্রামের আমিনুদ্দিন, হিজলডাঙ্গা গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন ও আব্দুল বারী মোড়ল, আলতাপোল গ্রামের আব্দুল খালেক, ভরত ভায়না গ্রামের হাসেম আলী, আনছার মোল্যা, মোকছেদ সরদার, কেসমত আলী, আনছার ফকির, ভান্ডারখোলা গ্রামের হোসেন আলী, বেলকাটি গ্রামের আকবর আলী, মোমিনপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মোড়ল, সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গণি শেখ ও নেহালপুর গ্রামের ইব্রাহিম কারিগরের বিরুদ্ধে যশোর আমলি আদালতে মামলা করেন(নং জিআর ২৩/১০)। আদালতের নির্দেশে ১৬ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর থানায় মামলা (নং ০৮/১০) হিসাবে রেকর্ড হয়।

এ ছাড়াও সারুটিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান সরদার তার চাচা মুক্তিযোদ্ধা জাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে ওই ১৫ জনসহ ১৮ জনকে আসামি করে একই বছরের ১৫ এপ্রিল থানায় মামলা করেন (নং জিআর ৫৩/১০)।

২০১২ সালের ১৪ জুন আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দিলে যশোরের পুলিশ সুপার মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।

২০১২ সালের ১ এপ্রিল আইসিটি বিধি কমপ্লেইন-১৪ নম্বরে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য নথিভূক্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক।

জাতীয় পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত এক সময় ছিলেন জামায়াত নেতা। ১৯৯১ সালে জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আবারও পরাজিত হন। এ সময় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।

পরে ২০০৬ সালে অলি আহমেদের এলডিপিতে যোগ দিলেও পরের বছর দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর তিনি যোগ দেন ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীর পিডিপিতে। ঘরোয়া রাজনীতি উন্মুক্ত করা হলে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ফিরে যান সাখাওয়াত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘন্টা জানুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।