ফরিদপুর: পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ছেলের কষ্ট চোখে দেখেননি মা। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, সোহাগ।
তাই, তো শত কষ্টের মধ্যেই একজন মায়ের চোখে আগুন আর কণ্ঠে বজ্রের মতো বেজে ওঠে বিচারের দাবি।
‘মৃত্যুর আগে ছেলের খুনির ফাঁসির খবর জানতে চাই। আর কিছুই চাই না’- কথাগুলো বলেছেন বরিশালে পেট্রোল বোমায় পুড়ে মারা যাওয়া ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের সোহাগের অন্ধ মা সেলিনা বেগম।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেলিনা বেগম এ সব কথা বলেন।
সেলিনা বেগম বলেন, তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ও বুকের মানিককে কেড়ে নিয়েছে পেট্রোল বোমা। সন্তান হারানোর কষ্ট শুধু একজন মা অনুভব করতে পারেন। আর কেউ না।
সেলিনা বেগম বলেন, হরতাল ও অবরোধের পেট্রোল বোমার আগুনে আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়, সে ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে। শেখ হাসিনার কাছে আমার অনুরোধ, হরতাল-অবরোধ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে বরিশালে পেট্রোল বোমায় পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ট্রাকের হেল্পার সোহাগ।
ওই ঘটনায় আহত ট্রাকচালক রিপনের বাবা আব্দুল লতিফ শেখও সরকারের কাছে দাবি জানান, হরতাল ও অবরোধ বন্ধের।
আব্দুল লতিফ জানান, ২০০০ সালে আখ মাড়াই মেশিনে দুর্ঘটনার কারণে তার বামহাত কেটে ফেলতে হয়। এরপর ক্ষেতের জমিজমা বিক্রি ও ব্যাংক থেকে ঋণ করে ট্রাকটি কেনেন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এখনো কয়েক লাখ টাকা ঋণ রয়েছে এলাকার কয়েকজনের কাছে। তার ওপর তার ট্রাকটি পুড়িয়ে দিয়ে পরিবারের আয়ের উৎস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে ছেলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে। চিকিৎসার টাকা যোগাড় তো দূরের কথা, পরিবারের লোকজনের মুখে খাবার জুটছে না।
এদিকে, ঋণের টাকা শোধের ভয়ে গ্রামে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন লতিফ।
প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জাহিদ রিপনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান, সূর্যোদয় প্রতিবন্ধী সংস্থার সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, এডিডির কর্মকর্তা তানজিদা জান্নাতিসহ আরো অনেকে।
এডিডি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহয়তায় সূর্যোদয় ও আস্থা প্রতিবন্ধী সংস্থা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
** শোকের মাতম সোহাগের বাড়ি