ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দু’দিন পূজিত হচ্ছেন বিদ্যাদেবী

সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
দু’দিন পূজিত হচ্ছেন বিদ্যাদেবী

ঢাকা: বাংলাদেশের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জ্ঞানলাভের আশায় শনিবার (২৪ জানুয়ারি) প্রথম দিনেই জাকজমকের সঙ্গে পূজা দিচ্ছেন বিদ্যাদেবী সরস্বতীর। তবে বেশিরভাগই রোববার (২৫ জানুয়ারি) বিদ্যাদেবীর আরাধনা করবেন।



এবার পূজার লগ্ন পড়েছে শনিবার বেলা ১১টা ৯ মিনিট থেকে রোববার সকাল ৮টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর‍ রেববার পূজা দেবেন বিদ্যা দেবীকে।

প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়।

পূজা শেষে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দিনভর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হবে ফলমূল, লুচি-তরকারি, নিরামিশ-খিচুরি, মিষ্টি-দই। সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে রয়েছে আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এবারই প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সরস্বতী বিদ্যাদেবীর পূজা দেওয়া হচ্ছে। পূজা করার সিদ্ধান্ত দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে।  

দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান-বিদ্যা-সংস্কৃতি ও শুদ্ধতার দেবী। তার সৌম্যাবয়ব, শুভ্র বসন, হংস-সম্বলিত, পুস্তক ও বীণাধারিণী দেবী বাঙালির হৃদয়ে এমনভাবেই বিরাজিত। নেই কোন অন্ধকার-অজ্ঞানতা-পঙ্কিলতা।

সরস্বতী বিদ্যাদেবী হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরাই প্রাণের উজার করা ভক্তিভরে পূজা দিয়ে থাকে। যেন শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকে, সহজতর হয়।

অনেকেই বাড়িতে পূজা করেণ বিদ্যাদেবীকে। তবে ঘটা করে পূজা দেওয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন-মঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন-মঠের মৃদুল মহারাজ বাংলানিউজকে জানান, তারা শনিবারই দেবী সরস্বতীর পূজা দিচ্ছেন। দেবী আরাধনা, অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ছাড়াও থাকছে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

শিক্ষাকে উঁচু স্তরে আসীন করা হয়েছে সনাতন ধর্মে। ঋষিরা ব্রহ্মের অনন্ত শক্তির অংশকে একেকজন দেব-দেবীরূপে কল্পনা করেছেন। ব্রহ্মের যে শক্তি আমাদের বিদ্যা শিক্ষাদান করেন তাকে সরস্বতী দেবীজ্ঞানে পূজা-অর্চনা করা হয়।

যে কারণে শাস্ত্রে বলা হয়েছে, চতুর্ভুজা ব্রহ্মার মুখ থেকে আবির্ভূতা শুভ্রবর্ণা বীণাধারিণী চন্দ্রের শোভাযুক্তা দেবীই হলেন সরস্বতী। সরস্বতীর ধ্যান, প্রণামমন্ত্র ও স্তবমালা থেকে সামগ্রিক রূপটি হল-‘তিনি শুভ্রবর্ণা শ্বেত পদ্মাসনা, শ্রীহস্তে লেখনী, পুস্তক ও বীণা’।

সরস্বতী দেবীর পূজার কথা শাস্ত্রে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে। বেদে নদীরূপে, যজ্ঞ কর্মাদিতে প্রজ্ঞাদাত্রীরূপে, ব্রহ্ম কৈবর্ত পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ কর্ণৎভবা বাগাধিষ্ঠাত্রীরূপে, শ্রীহরির ভাষারূপে, মৎস্যপুরাণে নৃত্য-গীতাদির সিদ্ধিদাত্রীরূপে সরস্বতীর কথা বর্ণিত আছে।

সরস্বতী মায়ের হাতের বীণা সঙ্গীতবিদ্যার প্রতীক। মনের ভাব প্রকাশ হয় ভাষায় আর প্রাণের ভাব প্রকাশ পায় সুরে। সুর মানুষকে বিমোহিত করে। প্রাণে আনন্দের সঞ্চার ঘটায়। সুরের লহরি সবাই শুনতে চায়। কিন্তু বেসুর কেউ শুনতে চায় না।

দেবীর হাতে বীণা প্রাণের বৈরাগ্য সৃষ্টিকারী ছন্দময় সুর। দেবীর পূজা সংহতি ও সম্প্রীতির রুপলাভ করেছে। প্রতিটি পূজা প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে সার্বজনীন আনন্দময় মিলনমেলার ক্ষেত্র বিশেষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।