বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো’র মৃত্যু সংবাদ ঢাকায় পৌছাঁর পর থেকে,বিশেষত:গণমাধ্যমে প্রচারের পর-সাধারন নাগরিকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল-চলমান সহিংস রাজনীতি হয়তো ‘শোকবিরতি’তে যাচ্ছে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতে সাধারনের আশা ফিকে হতে শুরু করে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে রওনা হবার আগেই, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী যখন জানালেন-শোকে মুহ্যমান বেগম খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে,তাই প্রধানমন্ত্রীকে তারা স্বাগত জানাতে পারবেননা। বেগম খালেদা জিয়া স্বাভাবিক হবার পর প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তারপর তিনি আসতে পারবেন। ২০ দলীয় জোটের যে আন্দোলন চলছে, তা চলতেই থাকবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গুলশান অফিসে অবস্থানরত খালেদাজিয়াকে দেখতে গেলেন। খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের কার্যালয়ের গেইটে নেমে দাঁড়ালেন,কিন্তু তাকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি। খালেদা জিয়া বা বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানাতেও কেউ গেইটে অবস্থান বা অপেক্ষা করেননি। ফিরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাধারন নাগরিকদের প্রশ্নের শেষ নেই। তারা জানতে চান-পুত্র হারানো মা, অর্থাৎ খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকতেই পারেন। অচেতন থাকাটিও স্বাভাবিক। কিন্তু দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বা সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পারতেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারতেন ভেতরে। সাংবাদিক ইউনিয়নের বিএনপিপন্থী গ্রুপের নেতা রুহুল আমিন গাজী’র গণমাধ্যমে দেয়া তথ্য মতে-ঐ সময়টিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে চার-পাঁচজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ভেতরে ছিলেন। তারা নাকি নিচে নেমে আসতে আসতেই প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন সেই আয়োজনটি কার্যালয়ের বাইরে স্পষ্টই ছিল। অর্থাৎ তার নিরাপত্তা দলের সদস্যরা ঘণ্টাদুই আগেই সেখানে উপস্থিত হয়। সেই আয়োজন দেখেও বিএনপি’র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য গেইটে অপেক্ষা করলেননা,প্রধানমন্ত্রীর জন্য দরজা খোলা হলোনা। এই আচরনটি শিষ্টাচার বর্হিভূত মনে করছেন সাধারন নাগরিকরা। তাদের মতে, সামাজিক শিষ্টাচার দেখাতে আওয়ামীলীগের সভাপতিই নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। আরো একধাপ এগিয়ে নাগরিকরা বলছেন-একজন মা ছুটে গেছিলেন আরেকজন মাকে সমবেদনা জানাতে। তাকে বেগম খালেদা জিয়া যেখানে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে একজন মহিলা হিসেবেও প্রধানমন্ত্রী তাকে একনজর দেখতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীকে সেই সুযোগটি না দেয়াকে শিষ্টাচার বর্হিভূত বলা হচ্ছে। এবং এর মাধ্যমে যদি বিএনপি আপোষহীনতা দেখানোর চেষ্টা করে থাকে, তাহলে সেই চেষ্টাটিকেও হঠকারী চেষ্টা বলছেন সকলপক্ষের নাগরিকেরাই।
রাজনীতির যে অচলাবস্থায় আটকে আছে রাষ্ট্র। গণতন্ত্র যখন বিলুপ্ত প্রায়। সেই সময় নাগরিকরা স্বপ্নের রসুন বুনতে চেয়েছিলেন,গনতন্ত্র ও সহিষ্ণুতার রাজনীতি বুঝি আবার বইতে শুরু করবে। কিন্তু দেখা গেলো একপক্ষ অপর পক্ষকে ফিরিয়ে দিলো। আম নাগরিকরা বলছেন এই ফিরিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীকে নয়। আসলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে গণতন্ত্রকে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫