ঢাকা: জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স।
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) বাদ আসর জানাজা শুরু হওয়ার পর ৫টা ১৫ মিনিটে সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, বনানী কবরস্থানের বি ব্লকের ১৮ নম্বর সারিতে অবস্থিত ১,৮৩৮/১৪৭ নং কবরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এ কনিষ্ঠ পুত্রকে দাফন করা হবে। তার কবর খনন করেন গোরখোদক আবদুর রহমান, জিতু মিয়া, জসিম, জালাল, সৈয়দ আলী, মজীদ মিয়া, কালাম ও শফিউল্লাহ।
এর আগে, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী, সমর্থক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বায়তুল মোকাররমে সম্পন্ন হওয়া জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে বাংলানিউজের সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ এবং উত্তর গেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় কর্তব্যরত স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নুরুল আমিন জানান, জানাজায় অংশ নেওয়া ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদভারে পুরো বায়তুল মোকাররম এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়।
মসজিদের দক্ষিণ গেটে অংশে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তার দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদ জানাজায় অংশ নেন বলে জানান মান্নান মারুফ।
তিনি জানান, বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেট থেকে পশ্চিম দিকে জিরো পয়েন্ট, পূর্ব দিকে স্টেডিয়াম মার্কেট ও এলাকা এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ দিকে গুলিস্তান সিনেমা হল পর্যন্ত জানাজার সারি লক্ষ্য করা যায়।
অপরদিকে নুরুল আমিন জানান, উত্তর গেটে জানাজায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ২০ দলীয় জোটের নেতা ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক প্রমুখ।
নুরুল আমিন বলেন, উত্তর গেট থেকে পশ্চিম দিকে পুরানা পল্টন মোড় ও তৎসংলগ্ন এলাকা এবং পূর্ব দিকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মী ও জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের লম্বা সারি দেখা যায়।
জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর নেতাকর্মীদের এক পলক দেখার সুযোগ দিতে কোকোর মরদেহ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ প্রান্তে রাখার কথা থাকলেও প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তাছাড়া, জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর মরদেহ বের করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল।
এদিকে, জানাজাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট, স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা ও জুয়েলার্স মার্কেট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ-ৠাব মোতায়েন করা হয়। দায়িত্ব পালন কেন সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও। এসব এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয় প্রিজন ভ্যান থেকে শুরু করে রায়টকার, এপিসি, জলকামান এবং ৠাকার পর্যন্ত।
জানাজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে সেজন্য বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটের দোকানপাট ও হকার ব্যবসায়ীদেরও তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও ৠাব সদস্য মোতায়েন করা হয় জুয়েলার্স মার্কেট, জিপিও ও পল্টন মোড় এলাকায়ও।
গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় মালয়েশিয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কোকোর মরদেহ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে।
পরিবারের পক্ষ থেকে কোকোর মরদেহ বুঝে নেন তার চাচাতো ভাই মাহবুব আল আমিন ডিউ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়া মনোনীত বিএনপির পাঁচ নেতা।
এরা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স বিমানবন্দর থেকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে কোকোর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পৌঁছায়। এরপর খালেদার কার্যালয়ের নিচতলার কনফারেন্স রুমে মরদেহ রাখা হয়। এ সময় মা খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে কোকোর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি তার মা খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
খালেদা জিয়া দরোজায় দাঁড়িয়ে ছেলের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে তোলা দেখেন। এসময় তার চোখ দিয়ে অঝোরধারায় অশ্রু ঝরতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
** বনানী কবরস্থানে প্রস্তুত কোকোর কবর
** বনানী কবরস্থানে খোঁড়া হচ্ছে কোকোর কবর
** বনানী সামরিকে অনুমতি মেলেনি, সাধারণ কবরস্থানে দাফন কোকোর
** ‘এ মৃত্যু নিয়ে আর রাজনীতি নয়’