ঢাকা: দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মের দায়ে খাদ্য অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিসি’র চার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। অভিযুক্ত এই চার প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে কাজ না দেওয়ার প্রস্তাব করে কমিটি।
কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, নৌ-পরিবহনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজী সাহিদুর রহমান ও মেসার্স এ এস ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি। অন্যদুটি প্রতিষ্ঠান হলো, মেসার্স আমপাং ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেসার্স পূবালী ট্রেডিং কোম্পানি।
দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিসি’র কোটি কোটি টাকা বিনাশ করা হলেও, প্রভাবশালী এসব ঠিকাদারদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নানা অভিযোগে বেশ কিছু মামলা করা হলেও, বছরের পর বছর ধরে এসব মামলা ঝুলে রয়েছে অজ্ঞাত কারণে।
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়।
কটিমিতে উত্থাপিত প্রতিবেনের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর তদবির জোরদার করা এবং তাদের মাধ্যমে বিনাশ হওয়া সরকারি অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে খাদ্য অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিসি’র ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের হিসাবের ওপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দেওয়া বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৌ-পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে পরিবহনকালে জাহাজ দুর্ঘটনায় ক্ষতি হওয়া গম ও চালের মূল্য ঠিকাদারের নিকট হতে আদায় করা যায়নি। এতে সরকারের ৬ কোটি ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কমিটি দায়ী নৌ-পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স কাজী সাহিদুর রহমান ও মেসার্স এ,এস ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানিকে পুনরায় কাজ না দেওয়া, দায়েরকৃত মামলার তদবির জোরদার করা এবং ঠিকাদারের নাম পত্রিকায় প্রকাশ করার সুপারিশ করে।
কমিটি আরও দুটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে বৈঠকে। এগুলো হচ্ছে- মেসার্স আমপাং ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ ও মেসার্স পূবালী ট্রেডিং কোম্পানি। গম সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ার পরও এ দুটি প্রতিষ্ঠান পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি) সময়মতো প্রদান করেনি। এতে সরকারের ১৫ কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার ৫৮২ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
কমিটি যথাসময়ে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি নগদায়ন না করায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি দায়েরকৃত মামলার তদবির জোরদার করার পরামর্শ দেয়।
প্রতিবেদনে আরও কিছু অনিয়মের বিষয় তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, খাদ্য শস্য সংগ্রহকালে বিধি বহির্ভূতভাবে ইনসেন্টিভ বোনাস প্রদান করার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৯ টাকা, আমদানিকৃত গম মংলা বন্দরে খালাসের সময় ঘাটতি গমের মূল্য আদায় না করায় ৩ কোটি ৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৫৮ টাকা, ইজারায় গৃহীত ফেরির ইজারা মূল্যের উপর এবং ক্যাটারিং ভেন্ডারের রয়েলটির উপর ভ্যাট ও আয়কর প্রদান না করায় ৭১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫১ টাকা এবং ফেরি পুনর্বাসন কাজ শেষে চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হলেও ঠিকাদারের নিকট হতে ১৪১ টন পুরাতন এম এস প্লেট বুঝে না নেয়ায় ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ক্ষতি হয়েছে।
কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ব্যয় বিভাজনের পত্র জারীর মাধ্যমে আপত্তিগুলো নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।
কমিটি সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য আ ফ ম রুহুল হক, মো. আফছারুল আমীন, মঈন উদ্দীন খান বাদল, মো. রুস্তম আলী ফরাজী এবং বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন। এছাড়াও সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসফেকা ইকফাৎসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫