ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাহিদুর-আফসার গুলি করে হত্যা করেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
মাহিদুর-আফসার গুলি করে হত্যা করেন

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর রাজাকাররা চাঁদশিকারী গ্রামের ১৬/১৭ জনকে ধরে বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে এনে অমানুষিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাজাকার মাহিদুর রহমান, আফসার হোসেন চুটু ও গফুর জোলা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে ১২ জনকে হত্যা করেন।



একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন  মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবিব। তিনি মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী।

এর মধ্য দিয়ে একটি মামলার আসামি মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো।
 
মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দেন মো. আহসান হাবিব। সাক্ষ্যগ্রহণে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। সাক্ষ্য শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেছেন মাহিদুর-আফসারের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় বুধবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত মুলতবি করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

বর্তমানে ৬২ বছর বয়সী সাক্ষী মো. আহসান হাবিব চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার একবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিনোদপুর আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।  
 
সাক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা এ সাক্ষী বলেন, এক-দেড়শ’ রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে চাঁদশিকারী, চামাটোলা, এরাদত বিশ্বাসের টোলা, কবিরাজ টোলা ও বিনোদপুর হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ঘেরাও করলে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা থেকে সরে পড়েন।
 
ওইদিন রাজাকার কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে রাজাকার মাহিদুর রহমান, আফসার হোসেন চুটু, গফুর জোলা ও রাজাকার মিনুসহ অন্য রাজাকাররা চাঁদশিকারী গ্রামের ১৬/১৭ জনকে ধরে বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে এনে অমানুষিক নির্যাতন করেন।
 
নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাজাকার মাহিদুর, আফসার হোসেন চুটু ও গফুর জোলা আটককৃতদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে ১২ জনকে হত্যা করেন। আটককৃতদের মধ্যে ৪-৫ জন পালিয়ে যান।
 
এ ঘটনা তিনি এক গোয়েন্দা সহযোদ্ধার কাছে থেকে জানতে পারেন বলে সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন আহসান হাবিব।
 
তিনি আরো জানতে পারেন, ওইদিন সকাল ১০টার দিকে রাজাকার মাহিদুর রহমান, আফসার হোসেন চুটু ও গফুর জোলা একই গ্রামের আরো ২০-২১ জনকে ধরে বিনোদপুর হাইস্কুলে নিয়ে এসে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন।
 
পরদিন বিকেল চারটার দিকে আটককৃতদের মধ্য থেকে ৬-৭ জনকে ছেড়ে দিলেও সন্ধ্যায় বাকিদের স্কুল মাঠে নিয়ে গিয়ে রাজাকার মাহিদুর রহমান, আফসার হোসেন চুটু ও গফুর তাদের গুলি করে হত্যা করেন।
 
সাক্ষ্যে শহীদদের নাম উল্লেখ করেন সাক্ষী। গুলিবিদ্ধ হলেও বেঁচে যাওয়া জাকারিয়া এবং ফসি আলম পরবর্তীতে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে বাধ্য হন। এখনো তারা বেঁচে আছেন বলে সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন সাক্ষী আহসান হাবিব।
 
এ ঘটনার ৬/৭ দিন পর রাজাকার মোয়াজ্জেম, মাহিদুর, গফুর ও আফসার হোসেন চুটু এবং পাকিস্তানি সেনারা কবিরাজটোলা ও এরদাত বিশ্বাসের টোলা গ্রামের ৭০-৮০টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
গত ১২ জানুয়ারি মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের পক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও বিপক্ষে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।
  
গত বছরের ২৪ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে (শ্যোন অ্যারেস্ট) মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

১৬ নভেম্বর এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

এ দু’জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। পরদিন ২৮ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউশন।

এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত শেষে ৭ খণ্ডে ৯৫৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুল মাঠে ও এর আশেপাশে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি করেন গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধু।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর রহমান ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসার হোসেন চুটুকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।