ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রামেক বার্ন ইউনিটে পোড়া গন্ধ ও আহাজারি

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
রামেক বার্ন ইউনিটে পোড়া গন্ধ ও আহাজারি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: পোড়া মানুষের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বাতাস। হাসপাতালের দেওয়ালে দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে রোগীর গোঙানি ও স্বজনদের আহাজারি।

সহিংসতার আগুনে পোড়া মানুষগুলোর আর্তচিৎকার ও হাহাকার ছাড়া আর কিছুই যেন শোনা যাচ্ছে না সেখানে।

চলমান হরতাল-অবরোধে ২০ দলীয় জোটের চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে স্থান হয়েছে এসব রোগীর।

বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি রয়েছেন ৮ জন। এরা হলেন, তানোরের ৪ বছর বয়সী শিশু আছিয়া, একই উপজেলার পাকচাঁনপুর গ্রামের শিশু ফারজানা (৫) তার দাদী জুলেখা বেগম (৪০), পুঠিয়ার কার্তিক (৪৫), তরুণ বিশ্বাস (৫২), মাহাবুর (২৫), চারঘাট এলাকার শিমুল (১৬), মোহনপুর উপজেলার টিয়ারপুর এলাকার আশরাফুল (৫০)। এদের মধ্যে শিশু আছিয়া রয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ)।

বার্ন ইউনিটে কথা হয় দগ্ধ জুলেখা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি তানোর উপজেলার পাকচাঁনপুর গ্রামে। তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার স্বামী মজিবর কাশিমপুর নয়াপাড়ায় মণ্ডল গার্মেন্টসে কাজ করেন। আর তিনি ডেল্টা স্পিনিংয়ে কাজ করেন। ভাগ্নির নবজাতককে দেখে ফিরছিলেন ঢাকায়।

গত ২৪ জানুয়ারি তার কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এর আগের দিন সন্ধ্যায় বাসে ওঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্বৃত্তদের হামলায় তার দুই হাত ও মুখমন্ডল ঝলসে যায়। নাতনি ফারজানার বাম হাত ও মুখের বাম পাশ পুড়ে গেছে। শুধু একটি চোখ দিয়ে অল্প দেখতে পাচ্ছে। এখন শরীরজুড়ে যন্ত্রণা। পোড়ার এই যন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন জুলেখা।

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সবার একই অবস্থা। শরীরজুড়ে অসহ্য যন্ত্রণাই এখন তদের একমাত্র সঙ্গী।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আফরোজা নাজনীন জানান, দগ্ধদের মধ্যে শিশু আছিয়ার ফেসিয়াল বার্ন হয়েছে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। আশরাফুলের অবস্থা নিয়েও তারা শঙ্কিত।

তবে আশঙ্কাজনক না হলেও অনেকেরই উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান, আফরোজা নাজনীন।

বার্ন ইউনিটে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে পোড়া রোগীর চাপ। অথচ বাড়ছে না চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা। ২৪ শয্যার বার্ণ ইউনিটে চিকিসা নিচ্ছেন ৩৪ জন।

পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় স্বল্প পরিসরের শুরু হওয়া এ ইউনিটটি এখন পোড়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। নেই আলাদা কোনো অপারেশন থিয়েটার। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

এ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানান, গত বছরের ২৪ জুলাই থেকে ২৪ শয্যা নিয়ে এ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু করা হয়। একজন সহকারী অধ্যাপক, একজন রেজিস্ট্রার ও দুইজন সহকারী রেজিস্ট্রারসহ মোট চারজন চিকিৎসক দিয়ে চালানো হচ্ছে বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম। নতুন ইউনিট চালু থেকেই এখানে রোগীর চাপ বেশি।

তিনি আরও জানান, এত কিছুর পরও রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন চিকিৎকরা।

রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে ইউনিউটটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পাশাপাশি এখানকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে আলাদা ৫ শয্যার আইসিইউ, ৫ শয্যার পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ, অপারেশন থিয়েটারসহ সব সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও জানান হাসপাতালের পরিচালক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।