ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্ন জয়ের যুদ্ধ

কৃষকের কাঁধে জোয়াল

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
কৃষকের কাঁধে জোয়াল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): জমি চাষের জন্য কলের লাঙল বা হালের গরু কোনোটাই নেই কৃষক ধুল্লা মিয়ার। ভাড়া করা কলের লাঙলে জমি তৈরির সামর্থ্যও নেই তার।

হালের গরু না থাকায় ধুল্লা মিয়া নিজেই কাঁধে তুলে নেন লাঙল, জোয়াল আর মই।

মথুরাপুর ইউনিয়নের খাদুলী গ্রামের মাঠে বর্গাচাষী ধুল্লা মিয়ার জমি চাষের এমন দৃশ্য দেখা যায়।

হাড়ভাঙা খাটুনি করে জোড়াতালি দিয়ে সংসার চালান কৃষক ধুল্লা মিয়া। পরের জমি বর্গা চাষ করে যা উপার্জন করেন তাই দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও চালান।    

বগুড়ার ধুনট উপজেলার খাদুলী গ্রামে ধুল্লা মিয়ার বাড়ি। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ধুল্লা মিয়ার সংসার। সহায় সম্বল বলতে মাথা গোজার ঠাঁই পৈত্রিক বসতভিটে ছাড়া আর কিছু নাই। দিনমজু‍রি খেটে চলে তার জীবন। এ ভাবেই পার করেছেন ৪৫ বছর।

জন্মের পর থেকেই ধুল্লা মিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছে অভাবের বিরুদ্ধে। নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করাতে চান তিনি। তবে অন্যের দু্ই বিঘা জমি বর্গা চাষ করে সেটা সম্ভব নয় তা জানেন ধুল্লা মিয়া। তাই চিন্তিত তিনি।

ধুল্লা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন। সেই জমিতেই নানা জাতের ফসল ফলান। ফসলের অর্ধেক জমির মালিককে দেন আর অর্ধেক নিজে নেন। এটাই ধুল্লা মিয়ার আয়ের উৎস।

তিনি জানান, এখন বোরো ধান চাষের পুরো মৌসুম। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে চলছে জমি তৈরি ও ধানের চারা লাগানোর কাজ। কেউ পাওয়ার টিলারে আবার কেউ হালের গরু দিয়ে চাষ করছেন জমি।

কিন্ত কলের লাঙল ভাড়া করে জমি তৈরির সামর্থ্য নেই ধুল্লা মিয়ার। তাই হালের গরুর মত নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন লাঙল, জোয়াল আর মই।

তিনি আরো জানান, সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে কারো কাছে হাত পাতেননি। তবে এখন খুবই চিন্তায় রয়েছেন এ বিষয় নিয়ে। এই ভাবে কতদিন  চালাতে পারবেন তাদের পড়ালেখার খরচ। এদিকে তাদের তেমন কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই, যিনি টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

ধুল্লা মিয়া বলেন, এতো অভাবের মধ্যেও স্বপ্ন দেখেন ধুল্লা মিয়া। তিন ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চান। যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন স্বপ্ন পুরনে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, দারিদ্রের অভিশাপে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি। কিন্তু অভাব জয়ের একমাত্র পথ লেখাপড়া এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। তাই তিন সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বড় ছেলে এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। মেজ মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।