ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ‘মৃতঘোষিত’ জীবিত সেই নবজাতকের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর তিনটার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান।
হাসপাতালের পরিচালক জানান, এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম জামালকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পাঁচ দিনের মধ্যেই।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই শিশুর ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এভাবে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া ঠিক হয়নি।
গাইনি ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পেটে ছয় মাসের বাচ্চা নিয়ে সুলতানা আক্তার হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দুই ঘণ্টা পর স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা প্রসব করেন সুলতানা।
শিশুটি ‘প্রিম্যাচিউরড’ হওয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ছিল ও হৃদস্পন্দন কম ছিল। সঙ্গে সঙ্গে ২১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা হয়। শনিবার সকালে শিশুটির নানি হনুফা বেগম তাকে কোলে নিয়ে দেখতে পান শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক নেই।
এরপর ২১২ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসককে এটা জানালে তিনি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রারকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সহকারী রেজিস্ট্রার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তিনি শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। ডেড সার্টিফিকেট নম্বর ৬৩৭০/১৮০।
ডেথ সার্টিফিকেট লেখার পর শনিবার সকালে অভিভাবকরা তাকে দাফনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে নিয়ে গোসল করানোর সময় নড়ে ওঠে শিশুটি।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. তারেক জানান, শনিবার সকালে তিনি কয়েকজন বন্ধু সঙ্গে নিয়ে তার দাদির কবর জিয়ারত করতে যান আজিমপুর গোরস্থানে। সেখানে গিয়ে দেখেন, গোরস্থানে জানাযার স্থানে ওই শিশুকে ঘিরে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শিশুটি হাঁ করে আছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে। এরপর সেখান থেকে আবার শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়।
ডা. ফেরদৌসি ইসলাম জানান, ওই শিশুকে বর্তমানে ২১১ ওয়ার্ডে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গতরাতেই অভিভাবকদের জানানো হয়, শিশুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিউই) রাখতে হবে। কিন্তু ঢামেকে আইসিইউ খালি নেই।
৪০ শতাংশ শিশু ছয় মাসে ভূমিষ্ঠ হয় এবং তাদের বাঁচানো খুব কঠিন হয় বলে জানান ডা. ফেরদৌসি।
শিশুটির মা সুলতানা আক্তার ও বাবা জাহাঙ্গীর আলম ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুঠিয়া এলাকার বাসিন্দা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫