ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অরক্ষিত মহাসড়ক, কেবলই হাঁকডাক!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫
অরক্ষিত মহাসড়ক, কেবলই হাঁকডাক!

ঢাকা: সড়ক নিরাপত্তায় কেবলই হাঁকডাক! রাতের মহাসড়ক রয়েছে আগের মতোই অরক্ষিত। হরতাল-অবরোধে বারবার বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলা হলেও চোখে পড়েনি কোনো ধরনের নজরদারি কিংবা অতিরিক্ত সর্তকতা।



একদিকে চলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা ‘হাঁকডাক’, অন্যদিকে সড়কে বের হয়ে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হচ্ছেন পথচারীরা, পুড়ছে যানবাহনও।

বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি। চোখে পড়েনি কোনো আনসার সদস্যকেও। মাঝে মাঝে দেখা মিললেও অনেকেই গুটিশুটি মেরে গাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।

সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে দ্রুত নেমে গাড়ির সামনেই অবস্থান করেন পথচারীদের ‘নিরাপত্তা’য় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। সংবাদকর্মী ওই এলাকা ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফের গাড়িতে উঠে ঝিমোচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, এর মধ্যেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানবাহন লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে পেট্রোল বোমা ও ককটেল। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গাড়ি, ভাঙচুর করা হয়েছে যানবাহনও।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে রাজধানীর গাবতলী থেকে আমিনবাজার এলাকায় সাভারের প্রবেশ মুখেই চোখে পড়ে পুলিশের একটি ভ্যান। সেখানেও গাড়ির ভেতরেই দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ওপর হামলা হলে নাশকতাকারীরা আরো উৎসাহ পাবে। সেই বাস্তবতায় আমাদের নিজেদের সর্তকতার বিষয়ে ফোর্সকে সর্তক রেখেছি।

‘আমি নিজেই যদি আক্রান্ত হই তবে আপনাকে নিরাপত্তা দেবো কী করে’- এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পালন করছি, ঝুঁকি আর সর্তকর্তা দুটোকেই অবলম্বন করে’।

আমিনবাজারে পুলিশের টহল দল চোখে পড়লেও ব্যস্ততম এলাকার হেমায়েতপুর পর্যন্ত দেখা মেলেনি পুলিশের কোনো টহল দলের।

সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় সুরুচি রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের একটি গাড়ি চোখে পড়লেও টহলরত অবস্থায় চোখে পড়েনি কোনো গাড়ি।

সাভারের সীমানা সিঅ্যান্ডবি বাসষ্ট্যান্ডে থেমে থাকা একটি গাড়ি নজরে আসে। সেখানে ছবি তুলতে গেলেই শীতে জড়োসড়ো হয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে নেমে আসেন। দাঁড়ান গাড়িটির সামনে।

সেখান থেকে সীমানা শুরু আশুলিয়া থানার। রাত ১২টা। এরপর নবীনগর পর্যন্ত কোনো পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশের দেখা মেলেনি। এর মাঝে রাতের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে রাস্তা কাঁপিয়ে ছুটে চলছে বিক্ষিপ্ত ট্রাক, লরি আর ব্যক্তিগত দু-একটি যানবাহন।

আশুলিয়া থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানান, থানা এলাকায় মহাসড়কের ৪৩ কিলোমিটার এলাকায় তিনটি টিম দায়িত্বে থাকে। সীমিত জনবল নিয়ে এবং জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

এদিকে ১২ হাজার আনসার নামানো হয়েছে বলে যে হাঁকডাক দেওয়া হয়েছিলো এই মহাসড়কের সাভার ও আশুলিয়ার নবীনগর পর্যন্ত অংশে দেখা মেলেনি তাদের কাউকেই।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোতালেব মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আনসার দেওয়া হয়েছে তবে একেবারেই সামান্য।

তিনি বলেন, পুলিশের জনবল তো বাড়েনি। দীর্ঘ এ মহাসড়কে আগের জনবল দিয়েই বাড়তি ডিউটি করানো হচ্ছে।

‘আর ফোর্স আসবেই বা কোথা থেকে, সবখানেই তো একই অবস্থা?’—প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ওসি মোতালেব বলেন, সড়কে এখন যে হামলাগুলো হচ্ছে তা সন্ত্রাসী কায়দায় চোরাগোপ্তা হামলা।

‘ধরেন আমি টহল দিয়ে একটি এলাকা অতিক্রম করলাম সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলন্ত একটি গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দেওয়া হলো। খবর পেয়ে সেখানে যেতে যেতেই হামলাকারীরা গা ঢাকা দেয়। এ অবস্থায় আমাদের আর কি-ই বা করার থাকে’- যোগ করেন তিনি।

সাভার থানার ওসি জানান, আমরা এ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমাতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করছি। বেশ কিছু স্থানে এর ফলও মিলেছে।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, মানিকগঞ্জ পর্যন্ত আমার থানার অধীনে ৩১ কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তায় আটটি অংশ নিয়োজিত আছে। পকেট ও মোবাইল পার্টি নিয়ে যে জনবল রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব নাশকতার ঘটনায় এরই মধ্যে একজনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও বোমা হামলার ঘটনা সে স্বীকারও করেছে আদালতে।

নাশকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করতে পারলেই এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসবে বলেও মনে করেন ওসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হাকঁডাকের-ও কিন্তু একটি ফল আছে। এর মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টিকারীরা পুলিশের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের বার্তা পায়। সেই সঙ্গে সড়ক ব্যবহারকারীও আশ্বস্ত হয়ে রাস্তায় নামেন।

‘তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এতো দীর্ঘ সড়কে তো ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না’—বলেন তিনি।

নাশকতা বন্ধে জনগণের সচেতনতা জরুরি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এলাকার চৌকিদারদের নিয়োজিত করেছি। তাদের মাধ্যমেই তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।