ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বের হলে মরি, ঘরে থাকলে মাথায় বাড়ি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, শাহজাহান মোল্লা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
বের হলে মরি, ঘরে থাকলে মাথায় বাড়ি ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মো. আবু সাঈদ (৪০), পেশায় সবজি চাষি ও ব্যবসায়ী। বাড়ি রাজধানীর অদূরে সাভারের বনগ্রাম ইউনিয়নে।

সেখানেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন তিনি।  

নিজের জমি বলতে ভিটে-মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্যের জমি লিজ নিয়েই সারাবছর সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সাঈদ। চলছিলও বেশ।

কিন্তু গত একমাস ধরে ২০দলের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে জীবন চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অন্য বাজারের মতো জমছে না রাজধানীর শাহআলী কাঁচাবাজারও।

পর্যাপ্ত মৌসুমি শাক-সবজি এলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না বিক্রেতারা। ফলে লাভ তো দূরের কথা মূলধনই পাচ্ছেন না।

ব্যবসায় লোকসান আর সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত আবু সাঈদের।

বললেন, ঘর থেকে বের হলে পেট্রোল বোমায় পোড়ার ভয়, ঘরে বসে থেকে বিক্রি না করলে সবজি ক্ষেতেই পঁচবে। বাজারে সবজির কোনো দাম-ই নাই। উপায় নাই, বের হলেও মরি, ঘরে থাকলে মাথায় বাড়ি।

শনিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে সরেজমিনে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর সংলগ্ন শাহআলী বাজারে দেখা যায়, ঢাকার আশপাশের কৃষক ও বিক্রেতারা ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, বেগুন, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ সবজি বাজারে নিয়ে এসেছেন।

কিন্তু পাইকারের অভাবে সেগুলো বিক্রি করতে পারছেন না। স্বল্পসংখ্যক স্থানীয় পাইকার বাজারে আনা সবজির দাম বলছেন খুবই কম।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে আবু সাঈদ জানান, এই মৌসুমে দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে। এরমধ্যে প্রায় একবিঘা জমিতে
ফুলকপি চাষ করেছেন। বাকিগুলোতে চাষ করেছেন বলেন, লালশাক, পালংশাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়া।

ফলন বেশ ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সবজি চাষে খরচ হয়েছে তাও উঠছে না।

হতাশার সুরে বাজারেই নির্ঘুম রাত কাটানো ব্যবসায়ী আবু সা‌ঈদ জানান, ফুলকপির এক একটা চারা এক টাকা করে কিনে রোপন করা হয়েছে।

এরসঙ্গে সার, বিষ, পানি আর শ্রম তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি ফুলকপিতে খরচ পড়ে ৬ থেকে ৭টাকা।

‘পরিবহন খরচ যোগ করে একটা ফুলকপি বিক্রি করে যে টাকা আসে তাকে আসলটা তুলাই দায়’—বলেন তিনি।  

পণ্য পরিবহনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী বলেন, আগে যেখানে এক লরি (প্রতি লরিতে কমপক্ষে ৬০০ পিস) ফুলকপি সাভার থেকে মিরপুর আনতে ন্যূনতম ৫০০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ৯০০ টাকা। বেড়েছে মাল লোড-আনলোডে শ্রমিকের মজুরিও।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে ২৯হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে ১৮হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি।

‘ফুলকপিসহ সবজি বেশিদিন ক্ষেতে রাখা যায়না। নষ্ট হওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়েই তা তুলতে হয়। ’—যোগ করেন তিন সন্তানের জনক আবু সাঈদ।  

আবু সাঈদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক তাকে সায় দিচ্ছিলেন।

একই সুরে পরিবহন চালক আব্দুর রব বলেন, আগে যেহানে দিনে ৪/৫টা ট্রিপ পাইতাম। অহন পাই মাত্র দুইটা। একট্রিপে আমরা পাই ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পাইলেও অহন মালিক দেয় ৩০০ টাকা।

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে অহন পথে গিয়া বইতে হইবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।