ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতাই ‘নিয়ম’ সাভার প্রধান ডাকঘরে

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতাই ‘নিয়ম’ সাভার প্রধান ডাকঘরে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা। টিক টিক করে ঘুরছে ঘড়ির কাঁটা।

সময় এগোচ্ছে। সঙ্গে অস্বস্তি জমা হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী শামসুদ্দিন মৃধার। একটু একটু করে তিন তিনটি ঘণ্টা শেষ! নাতনিকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।

সময়মতো নাতনিকে নিয়ে বাসায় না গেলে বৌমাই বা কি ভাববে- সাভার প্রধান ডাকঘরে পেনশনের সামান্য ক’টি টাকা তুলতে গিয়ে এসব চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মচারীর।

নয়টা বাজার আগেই টাকা তুলতে চলে এসেছিলেন ডাকঘরে। ইচ্ছে ছিলো টাকা তুলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নাতনিকে নিয়ে বাসায় ফিরবেন। তবে দীর্ঘ ৩২ বছর সরকারি চাকরি করলেও হালের অজানা নিত্য নতুন নিয়ম-কানুনই যত বিপত্তি মৃধা সাহেবের।

তার জানা ছিলো না সাভার ডাকঘর চলছে কর্মচারীদের মর্জি মাফিক। অফিসে যাওয়া না যাওয়া, থাকা না থাকা তাদের একান্ত মর্জি। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেন না এখানে কর্তব্যরতরা। তাদের নিজেদের নিয়মই ‘নিয়ম’ এখানে।

অবাক হলেও সত্যি, এভাবেই চলছে সাভারের প্রধান ডাকঘর।

দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পোস্টমাস্টারের দেখা না পেয়ে নিরাশ হয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেন অনেকে। আবার প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে না পেরে ভণ্ডুল হলো অনেকের পরিকল্পনা। কারণ যিনি ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার তিনি কাউকে ভার না দিয়েই অনুপস্থিত রয়েছেন অফিসে।

এমনিতেই জনবল স্বল্পতা। তিনজনের স্থলে দু’জন ডাকপিয়ন অপেক্ষায় ডাকের। আগের দিনের না বিলি করা চিঠিগুলো দেখছিলেন এক কোণে বসে। আর চার কাউন্টারের তিনটিই শূন্য। একটিতে পোস্টাল অপারেটর মোক্তার হোসেন ঢিমেতালে বিক্রি করছেন ডাক টিকিট নয়তো রেভিনিউ স্ট্যাম্প। করছেন চিঠি রেজিস্ট্রি। কখনো বা বিরক্তি নিয়ে বেশ সশব্দে সিল বসিয়ে দিচ্ছেন চিঠির ওপর।

কাউন্টার ঘিরে রয়েছেন অর্ধশতাধিক সেবাগ্রহিতা। কেউ স্কুল শিক্ষিকা, কেউ বা গৃহিণী। কেউ আবার শামসুদ্দিন মৃধার মতো অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী।

সবার অপেক্ষা পোস্টমাস্টারের জন্যে। মাস্টার এলেই কেউ হাতে পাবেন পেনশনের টাকা, কেউ বা ডাক জীবন বিমা, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা।

সবারই এক প্রশ্ন। মাস্টার কোথায়? আর নিজ কাজের মধ্যে থেকেই বিরক্তি নিয়ে একই কথা বলে যাচ্ছেন পোস্টাল অপারেটর মোক্তার হোসেন।

‘কাইল আসেন, ব্যক্তিগত কাজে মাস্টার আইজ আইতে পারবো না’

কিন্তু একথাতে-ও ভিড় নড়ে না। কাউন্টার বিপরীত দিক থেকে পাল্টা প্রশ্ন মাস্টার নাই তো কি? আমাগো টাকা দেন।

পাল্টা উত্তর- ‘আমারে চার্জ বুঝাইয়া দেয় নাই’।

এভাবেই চলছে সাভার প্রধান ডাকঘর। ইচ্ছে মাফিক অফিসে আসা যাওয়া আর কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি এখন সাভারবাসী।

চিঠির বিলি বণ্টন নিয়ে পুরনো অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মকর্তাদের ইচ্ছে মাফিক অফিসে আসা যাওয়া।

গৃহবধূ নাজনীন সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, এটা কেমন অফিস! পোস্টমাস্টারের ইচ্ছে না হয় অফিসে আসবেন না, তাই বলে কি আমাদের জিম্মি করবেন! তিনি তো অন্য কাউকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে পারতেন!

বাচ্চার স্কুলের বেতনটা আজ না দিলেই জরিমানা গুনতে হবে। সঞ্চয়পত্রের টাকাটা না তুলেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে!

স্কুল শিক্ষক রাধারানী গোস্বামী বাংলানিউজকে জানান, দুটি পিরিয়ড ক্লাস এক সহকর্মীকে বুঝিয়ে দিয়ে আসলাম টাকা তুলতে। বলে আগামীকাল আসতে। তাহলে বলেন কাল কি বলে স্কুল ছেড়ে আসবো!

গদাধর সাহা নামের এক বৃদ্ধার অভিযোগ, পেনশনের টাকা তুলতেও দুর্ভোগ।

কোনো জবাবদিহিতার ধার ধারছে না কেউ। তিনি বলেন, দু’দিনের সরকারি ছুটিতেও ব্যক্তিগত কাজ ফুরোয় না ডাক কর্মচারীদের। অফিসে এলেও পাওয়া যায় না তাদের।

যোগাযোগ করা হলে পোস্ট অফিসের পরিদর্শক আজাহারুল হক বাংলানিউজকে জানান, কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

তিনি জানান, এমনিতেই জনবল সংকট। তার ওপর পোস্টমাস্টার শামীমা সুলতানা ছুটিতে থাকায় কল্যাণী রানী সাহাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সেই কল্যাণী রানী সাহাও নিজের দায়িত্ব অন্য কাউকে বুঝিয়ে না দিয়ে বাড়িতে থাকায় দুর্ভোগ হচ্ছে।

তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।