নওগাঁ: খাদ্যশস্য উৎপাদনের বৃহৎ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধানের চাষ। আগে ভাগে চাষ শুরু করলেও চাষিরা বলছেন- ২০ দলের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে সার-ডিজেলের সঙ্কট সৃষ্ট হওয়ায় এবার বোরোতে শুরুতেই অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ পড়ছে দ্বিগুণ।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে এবার নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় মোট ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মাঘের শুরু থেকেই চাষিরা বোরো ধানের চারা রোপন শুরু করেছেন।
মাঘের তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই মাঠে চাষিদের বেড়েছে কর্ম ব্যস্ততা। সেচ ও হাল দিয়ে জমি প্রস্তুত করা ও বীজতলা থেকে নতুন চারা সংগ্রহ করছেন তারা।
নওগাঁ সদর উপজেলার মশরপুর এলাকার চাষি সাহার আলী জানান, বোরোকে স্থানীয় কৃষকরা ‘ইরি-বোরো’ হিসেবে চিনেন। সপ্তাহ খানেক হল এই ধান চাষে মাঠে কৃষকদের মাঝে চলছে এক রকম প্রতিযোগিতা। আগে রোপনে বেশি ফলন, তাই এই প্রতিযোগিতা। এছাড়া বোরো ধান কাটার সময় (বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস) প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আগে ভাগেই এ চাষ শুরু করতে হয়।
তিনি জানান, চলমান অবরোধ-হরতালের মধ্যেই চলছে বোরো রোপন। তাই সরবরাহ সঙ্কটে বেড়েছে সার ও ডিজেলের দাম। স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে হচ্ছে ৬৮.৪৪ টাকার স্থলে ৭৩.৭৫ টাকায়। ইউরিয়া বস্তা প্রতি বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া অন্যান্য সার কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
জেলার ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামের কৃষক ময়েজ উদ্দিন ও ইলিয়াস হোসেন জানান, স্থানীয় বাজারে ডিজেলের সংকট থাকায় বোরোতে বেড়েছে হাল ও সেচ খরচ। দ্বিগুণ চার্জ দিয়েও পাওয়ার টিলারের হাল পাওয়া যাচ্ছে না। গত মৌসুমের হাল খরচ সাড়ে তিনশ’ টাকার স্থলে এবার প্রতি বিঘায় দিতে হচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকা। সেচ খরচে একই অবস্থা। বিঘাপ্রতি পাঁচশ’ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন পাম্প মালিকরা।
তারা আরো জানান, এবার বোরো আবাদের শুরুতেই সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেশি খরচ গুণতে হচ্ছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সত্যব্রত সাহা বাংলানিউজকে জানান, শুরু থেকেই বোরো আবাদে চাষিদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, বাজারে ধান-চালের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবার চাষিদের উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৫০, সুগন্ধি জিড়াশাইল ও জিংক সমৃদ্ধ ব্রি-৪৬ জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব জাতের ধান ফলনে বেশি হয়। পাশাপাশি খরা সহিষ্ণু ও পোকার আক্রমণ থাকে কম।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ইরি-বোরোতে এবারও কৃষক বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপ পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫