ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের টানা হরতাল-অবরোধে রাজধানীর ফলের বাজারের পাইকারি বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে ফলের সরবরাহ যেমন কম, তেমনি পাইকারি ক্রেতাদের সমাগমও কম।
রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট ঘুরে আড়ৎদার, ফড়িয়া, মধ্যস্থতাকারী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোর ৫টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাক ও টলার থেকে আপেল, কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন প্রকারের ফলের কার্টন নামাতে ব্যস্ত আড়ৎকর্মী ও দিনহাজিরার শ্রমিকরা। আর তাদের কাছ থেকে পণ্য নিতে পাল্লা দিয়ে এক ট্রাক থেকে অন্য ট্রাকে ছুটে যাচ্ছেন ভ্যানচালকরা। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের এ ব্যস্ততা অনেক কম বলে জানান শ্রমিকরা।
ভোর ৫টা থেকেই ট্রাক থেকে ফল নামানোর এ চিত্র দেখা গেলেও আড়ৎগুলোর ভেতরের চিত্র ভিন্ন। তখনও আড়তে বসেননি মালিকেরা। তারা ট্রাক থেকে মাল কিনতে ব্যস্ত। ভোর ৬টার পর থেকে ফলের কার্টনে ভরে ওঠে আড়ৎপ্রাঙ্গণ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আড়তের ভিড় ও ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।
বাদামতলীর সালমান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন ফল বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। পাইকারি ক্রেতা কম থাকায় দামও কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যে ফল কার্টনপ্রতি ১ হাজার ৮শ’ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, বিক্রি ও সরবরাহ কম হলেও বেড়েছে পরিবহন খরচ। আগে যেখানে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া লাগতো, এখন হরতাল-অবরোধের কারণে তা বেড়ে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা হয়েছে।
বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে ট্রাকচালক রহিম বলেন, এখন কাজ অনেক কম। তাছাড়া রাস্তায় বের হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। রাতে ট্রাক আনি, আবার পরের রাতে ফিরে যাই। সারাদিন অলস সময় কাটাতে হয়।
রিতু-মিতু এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রাসেল জানান, বাদামতলীতে চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ফল আসে। আড়ৎদাররা ট্রাক থেকে কিনে নেন। এরপর বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি দরে কিনে নেন।
বিক্রির পরিস্থিতি খারাপ জানিয়ে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ কার্টন ফল কিনতাম। এখন ১০০ থেকে ১৫০ কার্টনের মতো কিনি। কারণ, বিক্রি অনেক কমে গেছে। দামও কম। অনেক সময় যে দামে কেনা হয়, বিক্রি করতে হয় তার চেয়েও কম দামে।
ব্যবসায়ীদের মতো হরতাল-অবরোধের এই সময়ে ভ্যানচালকদের আয়ও কমে গেছে জানিয়ে ভ্যানচালক মাসুম বলেন, ট্রাক থেকে ফল নামিয়ে আড়তে পৌঁছাতে কার্টনপ্রতি ১ টাকা দেয়। আগে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। তাছাড়া আগে আড়ৎদাররা ফল নামাতে ভ্যানচালকদের ট্রাকের কাছে ডেকে আনতেন। এখন ফল কম আসায় কাজ পেতে ভ্যানচালকদেরই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে ট্রাকের কাছে অবস্থান নিতে হয়। একই কথা জানিয়েছেন হানিফ মিয়া, আরিফ হোসেনসহ আরও কয়েকজন ভ্যানচালক।
বাজারের এই পরিস্থিতিতে আড়তের বেতনভুক্ত শ্রমিকদের আয় না কমলেও ভাটা পড়েছে দিনহাজিরার শ্রমিকদের আয়ে। আগে একজন দিনহাজিরা শ্রমিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতেন। এখন তা কমে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান অন্তর সাহা নামের এক শ্রমিক। অপদিকে বেতনভুক্ত মাছুম বলেন, আমার বেতন ৭ হাজার টাকা। এ টাকা কাজ হলেও পাই, না হলেও পাই।
** বের হলে মরি, ঘরে থাকলে মাথায় বাড়ি
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫