ঢাকা: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য আনতে অন্তত ২০টি পয়েন্টে পুলিশকে বখরা (চাঁদা) দিতে হয় বলে দাবি করেছেন ট্রাকচালক জুয়েল, জামাল ও বশির।
রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর সোয়ারিঘাট, বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে মাছ ও ফল আনা এসব ট্রাকচালকরা বাংলানিউজের কাছে এ অভিযোগ করেন।
একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা টলারেও চাঁদাবাজি করছে পুলিশ। সোয়ারিঘাট এলাকায় এ দৃশ্য বাংলানিউজের চোখে ধরা পড়ে।
ট্রাকচালকরা বলেন, হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমায় প্রায়ই চালক ও হেল্পারদের জীবন দিতে হয়। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রুটি-রুজির সন্ধানে রাস্তায় বের হচ্ছি। রাস্তায় পুলিশ পাহারায় আতঙ্ক কমলেও মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের ‘উৎপাত’। গাড়ি থামিয়ে চেকিংয়ের নামে করে হয়রানি। হয়রানি থেকে বাঁচতে দিতে হয় ২০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা চাঁদা।
চট্টগ্রাম থেকে মাছ বোঝাই ট্রাক নিয়ে আসা চালক জুয়েল বলেন, হরতাল-অবরোধের রাস্তায় পুলিশের পাহারা বাড়ানো হয়েছে। এতে পেট্রোল বোমা হামলা কমেছে। কিন্তু পুলিশের চাঁদাবাজি বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে সোয়ারিঘাট আসতে অন্তত ২০টি পয়েন্টে পুলিশকে ১০০ বা ২০০ টাকা এবং সাধারণ পোশাকে লাঠি হাতে পাহারায় থাকা ‘আনসার’দের ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। । আবার কোথাও বড় কর্মকর্তারা ধরলে ৫০০ টাকাও দিতে হয়।
তিনি বলেন, আগেও চাঁদাবাজি হত। তবে এখন পুলিশের পাহারা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদাবাজিও বেড়েছে। বলতে গেলে ‘পুলিশের জ্বালায় গাড়ি চালানো যায় না’।
পাশে থাকা ফড়িয়া (বন্দর থেকে মাছ এনে আড়তে বিক্রয়কারী) হেলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাছ আনতে গেলে পুলিশ রাস্তায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকের নামে বাঁধন খুলে ফেলে। এভাবে মাছ আনলে কেউ কিনতে চায় না। পুলিশ ‘মাছের নামে ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছিস’ এ ধরনের নানা কথা বলে চাঁদা দাবি করে। এই একটা ছোট্ট গাড়ি আনতে সব মিলিয়ে ১৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ভাড়া ১২ হাজার টাকা। বাকিটা পুলিশকেই দিতে হয়েছে।
বাদামতলিতে ট্রাকচালক জামাল ও বশির বলেন, সাধারণত ফল বোঝাই একটি গাড়ি আনতে আমরা ভাড়া নেই ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। এখন হরতাল-অবরোধের কারণে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা নিচ্ছি। তবে, এ টাকার একটি অংশ পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। একটি গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌছাতে চাঁদা দিতে হয় অন্তত ৪ হাজার টাকা। এছাড়া খ্যাপ (ট্রিপ) অনেক কম এবং রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই ভাড়া একটু বেশি নেই।
সোয়ারিঘাট এলাকায় ট্রলার থেকে পুলিশের চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক ব্যবসায়ী। সকাল ৬টার দিকে ট্রলার থেকে পুলিশের চাঁদা নেওয়ার দৃশ্য বাংলানিউজের চোখে ধরা পড়ে। চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ী সুদেব জানান, মাছের পরিমাণ দেখে পুলিশ টাকা নেয়। পুলিশকে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
এ সময় ট্রলারে থাকা পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি দ্রুত ট্রলার থেকে নেমে চলে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫
** ফল-ফলাদি আসে কম দামও কম
** বের হলে মরি, ঘরে থাকলে মাথায় বাড়ি