ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হরতালে আদালত বর্জন

সুপ্রিম কোর্ট বারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
সুপ্রিম কোর্ট বারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

ঢাকা: আইনজীবীদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে হরতালের দিন বিচার কাজে অংশগ্রহণ না করতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের দখলে থাকা সমিতির এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছেন তারা।



সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মো. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদিসহ সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক সাধারণ সভায় হরতালের দিন আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার তারা আদালতে আদালতে গিয়ে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান এবং বিচার কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।

বিক্ষোভে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, তারা যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তারা বিচারকদের রুমে রুমে গিয়ে তাদেরকে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেছেন। বিচারপ্রার্থী মানুষকে বিচার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কারো নেই। এর মাধ্যমে তারা আদালত অবমাননা করেছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের চার হাজার আইনজীবী আদালত চলার পক্ষে। যেকোনোভাবে আদালত চলবে। কেউ থামিয়ে রাখতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করেন আব্দুল মতিন খসরু।

তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের যে প্রয়াস সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নিয়েছে তা অবৈধ, অসাংবিধানিক, বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ, সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ১৬ কোটি মানুষের আছে।

বিএনপি জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো বেঞ্চ চলছেন দাবি করে তিনি বলেন, কিন্তু তারা যান না। আমরা মামলা করছি, তারা বাধা সৃষ্টি করছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সকলের। এটাকে দলীয় অফিস হিসাবে বাস্তবায়ন করা যাবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মো. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদি বলেন, মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় আমরা এই জায়গায় একত্রিত হবো। যদি ওই অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে আমরা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেবো।

তিনি বলেন, অবৈধ সাধারণ সভায় মাত্র ২৫ জন আইনজীবী ছিলেন। ২৫ জনের সিদ্ধান্ত সমিতি মানে না।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস বলেন, পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে। দলীয় এজেন্ডা সুপ্রিম কোর্টে
বাস্তবায়নের অপপ্রয়াস নিয়েছেন তারা। আইনজীবীরা তা প্রতিহত করবেন।

ফজলে নুর তাপস বলেন, আইনজীবীরা তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমরা মঙ্গলবার থেকে কর্মসূচি দেবো। আমরা আইনজীবীরা আমাদের অধিকার আদায় করবো।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মজার বিষয় হলো, তারা একটি রিট বেঞ্চ গিয়ে বিচারককে নেমে যাওয়ার অনুরোধ জানান। বিচারক জবাবে বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ না করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।

কিছুক্ষণ পরে ওই আইনজীবীরাই দল বেধে ওই আদালতেই মামলা করতে গিয়েছেন বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

তখন বিচারক বলেছেন, আপনারা সকালে আদালতকে নেমে যাওয়ার জন্য বলবেন। আবার এক ঘণ্টা পর মামলা করতে আসবেন, এটা হাস্যকর।

বিএনপি সমর্থক অধিকাংশ আইনজীবী মামলা করতে চান উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু আইনজীবী তাদের নেত্রীকে খুশি করতে এগুলো করছেন। তারা নিজেরাও মামলা করতে চান। সাধারণ জনগণও মামলা করতে চান।

রোববারের সাধারণ সভায় হরতাল চলাকালে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সকল বিচারপতিকে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত পাস করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সভার লিখিত সিদ্ধান্তগুলো উপস্থাপন করেন সমিতির সম্পাদক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।