ময়মনসিংহ: বাড়তি আয় রোজগারের জন্য ময়মনসিংহ শহরে প্রতিদিন চানাচুর বিক্রি করেন বুলবুল (৩০)। স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে তার ৫ সদস্যের পরিবার।
সারাদিন চানাচুর বিক্রির পর রাতে বাসে করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘গরিব পুড়িয়ে ক্ষমতায় যাওন যাইবো না’।
সোমবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন বুলবুল বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়েছে বুলবুলের মুখ। আঘাতে দু’ চোখ ফুলে প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। চেষ্টা করেও ঠিকমতো তাকাতেও পারছেন না। পোড়ার জ্বালা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে গোটা মুখায়বে ঘষে দেওয়া হচ্ছে মলম। তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন খেটে খাওয়া এ যুবক।
দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন ট্রাক চালক আলমগীর (৩০) ও মাইক্রো চালক শহীদুল (৩২)। একই দিনে বুলবুলও বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় দগ্ধ হন।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান কবে সুস্থ হবেন কিংবা আদৌ হবেন কী না এ ভাবনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বুলবুলের মা হালিমা খাতুন (৫০)। সন্তানের সেবা-যত্নের জন্য বার্ন ইউনিটের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। নীরবে চোখের দু’ কোণ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।
বুবুল বলেন, অভাবের সংসারে চানাচুর বিক্রি করে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫’শ টাকা আয় হতো। সেই টাকা দিয়েই চলতো সংসার। ভাবলেশহীন হয়ে দগ্ধ বুলবুল সেই রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন ঠিক এভাবে, ‘বাইত (বাড়ি) যাইবার লেইগ্যা শহরের টাউন হল থেইক্ক্যা বাসে উঠি।
কাঁচিঝুলি এলাকায় যাইতেই হঠাৎ কইরা দেহি আমার মুখে আগুন। ওই সময় মনে করছিলাম বেশি কিছু অইছে না। খুব বেদনা (যন্ত্রণা) করতাছে। তারাতারি বাস থেইক্ক্যা নাইম্যা মুক্তাগাছায় যাই। হেই জাগার ডাক্তাররা কইলো ময়মনসিংহ মেডিকেলে আইতে। অহন চোখ দিয়া চাইয়্যা থাকতে পারি না। মুখটা পুইড়্যা গেছে। আমার চেহারাডাই ওরা বিকৃত কইরা দিছে। ’
হরতালের আগুনে মাথার চুল, বাম গাল ও কান পুড়ে গেছে মাইক্রো চালক শহীদুলের (৩২)। জ্বালাও-পোড়াও দেখে অনেকদিন যাবত বেকার বসে ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাসের যাত্রী হয়ে নিজেই দগ্ধ হয়েছেন। ৬ সদস্যের পরিবারের আয়ের একমাত্র সম্বল ছিলেন তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছেন কী করে কাটবে সামনের দিনগুলো।
বুলবুলসহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন রোগী রয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দায়িত্বরত সেবিকা আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দগ্ধ ৪ জনই এখন আশঙ্কামুক্ত। আমরা তাদের উৎসাহ দিচ্ছি। তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। একদিন সুস্থ হয়ে তারা আবার কাজে ফিরবেন। পরিবারের স্বজনদের মুখে হাসি ফোটাবেন।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে শহরের কাঁচিঝুলি এলাকায় মুক্তাগাছাগামী একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫