ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সমালোচিত এক/এগারোর কুশীলব বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তারা মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নৃশংসতা বন্ধের জন্য কোনো চাপ না দিয়ে সরকারকে সংলাপ আয়োজনের কথা বলে উদ্যোক্তারা তাদের একপেশে মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন সমালোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেন, ‘সংলাপী’দের (সংলাপের উদ্যোক্তা) বেশির ভাগই এক/এগারোর কুশীলব। যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এক/এগারো করেছিলেন, সেই একই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এবারও তৎপর।
মন্ত্রীদের এমন মতামতে প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্ন করেন, যারা সংলাপের কথা বলছেন তারা কি একবারও পেট্রোল বোমা মারা বন্ধ করার কথা বলেছেন? আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো বন্ধ করার কথা বলেছেন? সহিংসতা থামানোর কথা বলেছেন? সন্ত্রাস বন্ধ করার কথা বলেছেন?
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (সুধীসমাজের প্রতিনিধি) সংলাপের কথা বললেও সহিংসতা-সন্ত্রাস বন্ধ করার কথা বলছেন না।
এ সময় মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা কীভাবে সংলাপের কথা বলেন? তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচিত সংসদেই তো সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। যারা (বিএনপি জোট) সংবিধান সংশোধনকে (নির্বাচনী পদ্ধতি) মানে না তাদের পক্ষে কথা বলছেন তিনি।
আরেক সদস্য বলেন, ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নারা সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়ে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে কিছুই বলেননি।
মন্ত্রিসভার সদস্যরা মতামত দিয়ে বলেন, এই সংলাপের উদ্যোগ ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরেকটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেই কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আগুন দিয়ে, বোমা মেরে মানুষ হত্যার বিষয়ে তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে কিছু বলেননি।
তাছাড়া, পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দাবি আদায়ের কোনো নজির নেই, বাংলাদেশেও তা অসম্ভব। আর সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করলেই যে সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে, তারও কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বৈঠকে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রসঙ্গ তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নিজেরাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করেছেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক জি এস ডা. মুশতাক হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ও শফি সামী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ।
আলোচকদের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেই আলোকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনকে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫