ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘চরম আদালত অবমাননাকর’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
‘চরম আদালত অবমাননাকর’ খন্দকার মাহবুব হোসেন/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া বক্তব্যকে ‘চরম আদালত অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।



একটি জাতীয় দৈনিকে মঙ্গলবার ‘বিভক্ত রায় ও রায় না লেখা ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদে বলা হয়, ‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এক দণ্ডিতের রায় কার্যকর না হওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি বিভক্ত রায় দিলেও তিনি এখনো লিখিত রায় জমা দেননি। রায় পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। আইনমন্ত্রী সন্দেহ পোষণ করে বলেছেন, এটাও ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে’।

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভায় সোমবার এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি রাজধানীর ধানমণ্ডি ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে এ স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘একজন (সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক বিচারপতি) বিভক্ত রায় দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনো রায় লেখেননি। আইনে বলে, পুরো রায় না পাওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর করা যায় না। ওনাকে রায় লেখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, এখন দেখা যাক। আপনি বিভক্ত রায় দিয়েছেন, এতোই যখন জ্ঞান, রায় লিখতে অসুবিধা কী? তবে এটাও কিন্তু ষড়যন্ত্রের একটা অংশ হতে পারে’।

এ সংবাদটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন খন্দকার মাহবুব।

কামারুজ্জামানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আইনমন্ত্রী একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ছিলেন। তার এ ধরনের বক্তব্য ‘চরম আদালত অবমাননাকর’।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের অনেক রায় আছে যার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ পায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় ১৬ মাস পর, কাদের মোল্লার রিভিউয়ের রায় ১১ মাস পর, ফতোয়ার রায় সাড়ে তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গভাবে বের হয়েছে।

এমন অসংখ্য রায় রয়েছে, যা প্রকাশ করতে আদালত দীর্ঘ সময় নেন। এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে, তা যদি বলা হয়, তাহলে তা আদালত অবমাননার সমতুল্য।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মন্ত্রীকে অবিলম্বে এ বক্তব্য সঠিক নয় বলে জনসম্মুখে বলতে হবে। যদি তিনি তা না বলেন, তবে আমি মনে করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার জন্য একটি ব্যবস্থা হওয়া উচিত’।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৩ নভেম্বর তার আপিলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ। ওই বেঞ্চে ছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা), বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।