ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ৬৯ কোটি টাকা খরচে অনিয়ম

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত ৬৯ কোটি টাকা খরচে অনিয়ম

ঢাকা: মূল প্রকল্পের বাইরে প্রকল্প সংশোধন ছাড়াই অতিরিক্ত ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করেছে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

‍এছাড়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর বিধান থাকলেও তা অনুসরণ করেনি মন্ত্রণালয়।



এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সম্প্রতি ‘কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের উপর অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় এই অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে।

সভায় অংশ নেওয়া আইএমইডি’র এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন,  প্রকল্পে ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে খরচ করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যা পরিকল্পনা কমিশনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। প্রকল্প সংশোধনের আগেই এ টাকা খরচা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,  দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে যাতে
পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শৃঙ্খলা যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সভায় মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করবে না।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে নানা ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। বারবার সময় ও ব্যয় বাড়ানো হলেও ঝুলে রয়েছে প্রকল্পের কাজ। জানুয়ারি ২০০৩ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০০৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল মাত্র ১৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এবং প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত।

শুধু এখানে থেমে থাকেনি। তৃতীয় ধাপে প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও একধাপ বাড়ানো হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ২৩ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৫শ’ ৮৮ কোটি ১ লাখ টাকা। এবং সময় বাড়ানো হচ্ছে ডিসেম্বর ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

আইএমইডি সূত্র জানায়, যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে মূল প্রকল্প ব্যয় ১শ’ ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ’ ৮৮ কোটি ১ লাখ টাকা। এতে মূল প্রকল্প থেকে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪শ’ ০৭ কোটি টাকা। সময় বেড়েছে প্রায় ১২ বছর।

দ‍ুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে (যেমন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন ট্রেনিং একাডেমি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা) সম্পৃক্ত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটি পরিচালনা করা হয়েছিল।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউনাইটেড কিংডমস ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) আর্থিক সহায়তায় ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। পরে প্রকল্পে কানাডীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (সিডা) ও অস্ট্রেলিয়ান এইড আর্থিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়।

কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (সিডিএমপি) জাতীয়
প্রকল্প পরিচালক এম আবদুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম মেনেই আমরা অতিরিক্ত ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করেছি। তারা (আইএমইডি) এই টাকার হিসাব পেলো কীভাবে? আমরাই এই হিসাব দিয়েছি। সংশোধিত কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাবনা (আটিপিপি) আইএমইডি’র আওতায় পড়ে না, তাই এই খরচ যুক্ত করা হয়নি।

এম আবদুল কাইয়ুমের দাবি, ৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচে পরিকল্পনা কমিশন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেনি।

সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারিগরি প্রকল্প হওয়ার কারণে সময় বেড়েছে। কারণ কখন কোনটা লাগছে ঠিক বলা যাচ্ছে না।

দুটি উন্নয়ন সহযোগী প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলেও জানান আব্দুল কাইয়ুম।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।