বেনাপোল (যশোর): বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি রফতানি বাণিজ্যেও এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। দেশের সর্ববৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য কমেছে ৬০ ভাগ।
এর ফলে ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ওপরও বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
পণ্য উৎপাদনে শ্রমিক ও কাঁচামালের সংকট, পণ্য খালাস ও পরিবহনের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ খরচ এবং মহাসড়কে নাশকতার আশঙ্কায় রফতানিকারকরা ব্যবসা কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বেনাপোল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে দেশের ৮০ ভাগ ব্যবসায়ীরা এপথে রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এখন আমরা রফতানি করছি এমন অনেক পণ্য গত ৫ বছর আগেও ভারত থেকে আমদানি করা হতো। আমরা অনেকটা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এখন দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান ভালো হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে রফতানি বাণিজ্য বেড়েছে তিনগুণ।
তিনি আরও বলেন, আমদানি বাণিজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের পণ্য এখন ভারতে রফতানি হচ্ছে। দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ শহর অঞ্চলে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে সেখানে দিন দিন রাজনৈতিক হিংস্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরা অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরেছে। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমদানি হওয়া কাঁচামাল সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রফতানি বাণিজ্যে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ খরচ এবং মহাসড়কে নাশকতার আশঙ্কায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা উৎপাদন কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে। সময় মত মাল সরবরাহ করতে না পারায় বিদেশি ক্রেতারা এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়ে দেউলিয়া হচ্ছেন। দিন দিন এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সরকারি ও বিরোধী দলের ভেবে দেখা উচিত বলে জানান তিনি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন বছরের শুরুতে আবারও একই সমস্যার কবলে পড়েছেন। এতে বাণিজ্য ব্যহত হওয়ায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসছে ব্যবসায়ীরা। সরকার দ্রুত এ অচলাবস্থা কাটিয়ে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটি প্রত্যাশা করেন ব্যবসায়ী এ নেতা।
বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, অবরোধের আগে গড়ে প্রতিদিন ভারতে দেশিয় উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হতো ২শ থেকে ২৫০ ট্রাক। বর্তমানে অবরোধের কবলে পড়ে প্রতিদিন তা কমে দাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৭০ ট্রাক।
ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে, পাট ও পাটের তৈরি সামগ্রী, জামদানি শাড়ি, শার্ট, টি-শার্ট, টুকরা কাপড়, মেলামাইন, মাছ, চালের কুড়া, বসুন্ধরা টিস্যু পেপার, সাবান, কাঁচা লোহা, গ্যাস সিলিন্ডার, মেহগনি ফল, ধনে, নারিকেলের শলাসহ অর্ধ শতাধিক পণ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল বাংলানিউজকে জানান, অবরোধে বেনাপোল বন্দরে ২০দলের কোনো বাধা না থাকায় শুরু থেকে এপথে বাণিজ্য চলছে। তবে দেশে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য খালাস আগের চেয়ে কমেছে এবং ভারতে পণ্য রফতানিও হচ্ছে কম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাণিজ্য বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫