ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা।
সাগর-রুনি হত্যার তিন বছরের পূর্ণ হওয়ার দিন বুধবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) আয়োজনে ডিআরইউ চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় ও সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসারফ হোসেন ইসা, সাইফুল ইসলাম তালুকদার, রফিকুল ইসলাম আজাদ, খায়রুজ্জামান কামাল, মাহমুদুর রহমান খোকন এবং রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান।
কলামিস্ট-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে যে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিচারের আশ্বাস দিয়ে না করে কালক্ষেপণ করে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছে সরকার। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা আশা করি, এ হত্যার বিচার একদিন হবেই। না হলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাগরের মা যখন আমাকে ফোন করে বলেন, তুমি তো সব জানো। কেন বিচার হচ্ছে না? আমি কোনো জবাব দিতে পারি না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর একজন সাংবাদিক হত্যার বিচার ছাড়া আমরা আর কোনো সাংবাদিকের হত্যার বিচার হতে দেখিনি। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাংবাদিক হত্যার বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ক্ষমতায় গিয়ে সবকিছু ভুলে যায়।
প্রভাবশালীদের কারণে সাংবাদিক হত্যার বিচার হচ্ছে না মন্তব্য করে মঞ্জুরুল আহসান বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়ার কারণ আমরা কতোটা সাংবাদিক-রাজনৈতিক কর্মী তা গুলিয়ে ফেলি।
‘সাংবাদিকতা পেশাকে রাজনৈতিক অন্ধকার মহলের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলায় আজ সাংবাদিকরা মামলা, হামলা, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছেন’ বলেন তিনি।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, দলীয় রাজনীতির বাইরে পেশাদারিত্ব নিয়ে আসলে সবাই আমাদের শ্রদ্ধা করবে। শুধু সাংবাদিক হত্যা কেন, সব হত্যার বিচার করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।
মঞ্জুরুল বলেন, যারা ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাদের লজ্জা হয় না। তিন বছর পেরিয়ে গেলো, এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার করতে পারলো না।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আইজিপি বলেছিলেন, প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিচার না হওয়ার জন্য নিজেদের ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, সাগর-রুনি হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী তাদের ছেলে মেঘের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। তিন বছর পার হলেও নেননি। আশা করি দ্রুত নেবেন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সাগর-রুনি হত্যার বিচারটাও করেন। শাহেদ বিগত সময়ে বন্ধ গণমাধ্যমগুলোও খুলে দেওয়ার দাবি জানান সরকারের কাছে।
মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, সাগর আমার সহকর্মী ছিলেন। আমরা অন্য মানুষের মতো দাবি আদায়ে ভাংচুর করতে পারছি না। গাড়িতে আগুন দিতে পারছি না। তাই বিচারও পাচ্ছি না। সাগরের মতো একজন ভালো সাংবাদিককে হত্যা করা হলো। বিচার হচ্ছে না কেন? বিচার হলে শান্তনা পেতাম।
তিনি বলেন, এতো বড় ঘটনার বিচার হবে না, এটা বিশ্বাস করা যায় না।
মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে এটা কেউ ভাবেনি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, সেহেতু সাগর-রুনি হত্যার বিচারও একদিন হবে।
হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পার হলেও বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার দাবি করেন বক্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫