ঢাকা: ‘আচ্ছা মামা, কনতো দ্যাশটার কী অইল! প্রতিদিন মানুষগুলারে জ্বালাইয়া মারতাছে। দ্যাশে কি আবার নতুন কইরা যুদ্ধ শুরু অইল! যারা রাজনীতি করে তারা তো কেউ মরতাছে না, মরতাছে খালি আমাগো মতো গরিব মানুষ।
যারা রাজনীতি করে তাগোর কি আমাগো জন্য কোনো মায়া দয়া নাই- এমন প্রশ্ন ছুড়ে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে মঞ্জুর বলতে থাকেন, আপনাগোর অনেক টাকা-পয়সা আছে, তাই বাসায় বইসা বইসা রাজনীতি করেন। রাস্তায় বাইর হওয়ন লাগে না। কিন্তু আমরাতো রাজনীতি বুঝি না, বুঝি পেটের জ্বালা। প্রতিদিন রাস্তায় না বাইর অইলে, বউ-পুলাপান লইয়া না খাইয়া মরণ লাগবো।
হত দরিদ্র মঞ্জুর রাজনীতি বলতে বোঝেন কেবল নির্বাচনের সময় একটা ভোট দেওয়াকে। এটাও জানেন যে, ভোটের সময়ই কেবল তাদের কদর বাড়ে। অন্য সময় তাদের কথা কেউ মনে রাখেন না।
‘পাঁচ বছর পর পর তো এরাই আইসা আমাগো হাতে-পায়ে ধরে ভোটের জন্য। তখন মনে হয়, তারা বুঝি আমাগোর কত আপন! কিন্তু ভোট শেষ, তাগোর মায়া-দয়াও শেষ!’
মঞ্জুর যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, তখনও তিনি আমার পরিচয় পাননি। বুধবার রাতে কারওয়ান বাজার থেকে রাসেল স্কোয়ার যেতে তার রিকশার যাত্রী হয়েছিলাম।
এক পর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার বর্তমান হাল হকিকত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার হাজারীবাগে। ১৫-২০ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। কিন্তু গত এক মাসের মতো দুর্ভোগ তাকে কখনো পোহাতে হয়নি।
প্রতিদিন যেখানে ৬শ’-৭শ’ টাকা আয় হতো, গত একমাসে তা নেমে এসেছে আড়াই থেকে তিনশ’ টাকায়। তার মধ্যে ১২০ টাকা আবার রিকশার মালিককে জমা দিতে হয়। যা থাকে তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারে খাওয়াই ঠিকমতো জোটে না। এরপরে আবার বাড়ি ভাড়া। ছোট দুই সন্তান স্কুলে পড়াশুনা করে। তাদের হাতে টিফিনের জন্য পাঁচ-দশ টাকাও গুজে দিতে পারেন না তিনি।
দুইটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তার কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু গত এক মাস ধরে তিনি কিস্তি দিতে পারছেন না। প্রতি সপ্তাহে এনজিও কর্মীরা এসে শাসিয়ে যাচ্ছে বলেও জানালেন তিনি।
হরতাল অবরোধ বন্ধ না হলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আর বেশিদিন ঢাকায় থাকতে পারবেন না- এমন উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি অইছে। তাতে আর বেশিদিন ঢাকায় থাকন যাইবো না মামা। বউ-পুলাপান লইয়া আবার গ্রামের বাড়িই চইলা যাইতে হইবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫