ঢাকা: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করার বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারকে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার দুই আসামি ওই দুই ভাইকে গত মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গ্রেফতার করা হয়।
এরপর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতার হওয়া দুই আসামিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি পুলিশের হেফাজতে রাখার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর আসামি দু’জনকে আবার কারাগারে পাঠাতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আদেশের ভিত্তিতে মহিবুর ও মুজিবুরকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই দিন প্রসিকিউটর সীমন বলেছিলেন, আসামিরা দুই ভাই। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, অত্যাচার, দেশান্তরসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্ত সংস্থা সহোদর দুই আসামিকে গ্রেফতারের জন্য প্রসিকিউশনের কাছ আরজি জানান। এরপর প্রসিকিউশন তদন্তের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনাল ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পর পরই বেলা ১২টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া (৭০) ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে(৬৫) গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমুরশামা গ্রামের বাসিন্দা বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নবীগঞ্জ থানায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। তারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার আকল মিয়া ও রজব আলী নামে দুই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া তারা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করেন।
এসব অভিযোগ এনে ২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী সানাউল হকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দল হবিগঞ্জে আসেন।
পরে তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের সত্যতা পান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫