যশোর: ড্যান ডব্লিউ মজীনা, শাইখ সিরাজ, তোফায়েল আহম্মেদ, ড. আতিকুর রহমান আমাকে চেনেন-জানেন, এতেই আমার জীবন সার্থক। অনেক সম্মাননা পেয়েছি, কোটি কোটি টাকা আয় করেছি, পৃথিবীর ১৮টি দেশ ঘুরেছি।
বাংলানিউজকে এভাবেই বলছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের সফল ফুলচাষি শের আলী সরদার(৬২)।
নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করা শের আলী সরদারের সঙ্গে বাংলানিউজের প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন অনেক স্মৃতি ও বর্তমান প্রজন্মের ফুল চাষিদের অজানা নানা তথ্য।
শের আলী বাংলানিউজকে বলেন, ঝিকরগাছায় আমি ফুল চাষের জনক দাবি করি না। তবে, দাবিদার অন্য কেউ নেই উল্লেখ করে বলেন, তার বাবা মরহুম আব্দুর রহমান সরদারের একটি ফলজ ও বনজ নার্সারি ছিল।
যশোর-বেনাপোল সড়কের রজনীগন্ধা ফিলিং স্টেশনের ধারে অবস্থিত ওই নার্সারির নাম ছিল সরদার নার্সারি। এ নার্সারিতে উৎপাদিত বিভিন্ন গাছের চারা বিক্রি করেই চলতো শের আলীর পরিবার।
১৯৮২ সালে ভারত থেকে দেশে ফিরছিলেন নূর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তার হাতে বেশ কিছু রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক ছিল। পথিমধ্যে নূর ইসলাম পানি পানের উদ্দেশে সরদার নার্সারির সামনে নামেন। ওই সময় শের আলীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
রজনীগন্ধা ফুল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নূর ইসলাম তখন বলেছিলেন, তোমরা তো নার্সারিতে এ ধরনের ফুল গাছের চারা উৎপাদন করতে পারো। দুজনের মধ্যে এ আলোচনার কয়েক মাস পর নূর ইসলামের মাধ্যমে ভারত থেকে রজনীগন্ধা ফুলের বীজ আনেন শের আলী।
পানিসারা গ্রামে ৩০ শতক জমিতে ওই বীজ বপন করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ওই জমিতে প্রথম ফুল ধরতে শুরু হয়। সেই বছর ২০০পিস গোলাপ নিয়ে ঢাকায় যান শেরআলী। তা বিক্রি করেন হাইকোর্টের সামনের একটি দোকানে। পরবর্তীতে শের আলীর কাছ থেকে ফুল নিয়ে মজনু সাহেব নামে এক ব্যক্তি ঢাকা ক্লাব সংলগ্ন মালঞ্চ নামে একটি ফুলের দোকান খোলেন।
নিজে ফুলচাষের বিস্তার ঘটিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করে ফুলচাষে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। এভাবে পর্যায়ক্রমে পানিসারাসহ আশপাশের এলাকায় বিস্তার লাভ করে ফুলের চাষ। বর্তমানে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা, হাজিরবাগ, শিমুলিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে একচেটিয়া ফুল চাষ হচ্ছে।
ফুলচাষি শের আলী বর্তমানে দুই একর জমিতে জারবেরা ও গ্লাডিওয়াস ফুল চাষ করছেন। তবে, এ এলাকার নারী-পুরুষ মিলে সাড়ে তিন হাজার লোক ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় মাঠের পর মাঠ শুধু ফুল আর ফুল।
এ এলাকার উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য স্থানীয় গদখালী বাজারে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি ফুল হাট। প্রতিদিন সকালে এ হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী ফুল কিনতে আসেন।
সফল ফুল চাষি শের আলী সরদার আরও বলেন, আমি জীবনে কখনো ফুলের বীজ বিক্রি করিনি। যতটা পেরেছি কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এ অঞ্চলের ফুল চাষ দেখতে ড্যান ডব্লিউ মজীনা, শাইখ সিরাজ, ড. আতিকুর রহমানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার লোকজন ঘুরতে এসেছেন।
তিনি সফল ফুলচাষি হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় পৃথিবীর ১৮টি দেশে ভ্রমণ করেছেন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে পেয়েছেন বিভিন্ন ধরণের সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ। ফুল চাষ করে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি কিনে ফুলচাষ করছেন।
এছাড়াও তার ছেলে ফারুক হোসেনকে বছর দেড়েক আগে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। স্বপ্ন আছে, খুব দ্রুত আমেরিকায় গিয়ে ফুলের চাষ শুরু করব তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫