ঢাকা: কমলাপুর স্টেশনে ডুকরে কেঁদেই চলেছেন এক যুবক। কান্নার মাঝে ফোনও আসছে।
কিছুক্ষণ পর তার পাশে বসে কথা বলে জানা গেলো যুবকের নাম শিহাব উদ্দিন। বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। ঢাকার বাড্ডার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। দুপুরেই শিহাব শুনেছেন, তার বাবা বার্ধ্যক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। এ সংবাদ শুনে বাড়ি যেতে ছুটে গিয়েছেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। সেখানে বাস যাবে না শুনে অটো রিকশায় ছুটে এলেন কমলাপুর স্টেশনে।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় কমলাপুর স্টেশনে এসে শুনলেন ৩টা ২০মিনিটের নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৫টায় স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসুচিতে শিডিউল বিপর্য্যয়ের পরও মানুষ ট্রেনেই ভরসা রাখছে। ট্রেনে নাশকতা চললেও যাত্রীরা এ গণপরিবহনকে তুলনামূলক নিরাপদ মনে করছেন।
এদিন বিকেলে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা হয় চট্টগ্রামগামী গোধূলী এক্সপ্রেসের যাত্রী সাঈদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্টেশনের মনিটরে উল্লেখ করা হয়েছে ৪টা ২০ মিনিটের গোধূলী রাত সাড়ে ৯টায় ছাড়বে। তবু ছাড়ছে তো…কি করা আমাদের তো যেতে হবে।
স্টেশনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কোনো উপায় না দেখে তুলনামূলক কম ঝুঁকি মনে করে ট্রেনকেই বেছে নিয়েছেন।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মানুষ ট্রেনের উপরই ভরসা রাখছে। এজন্য যাত্রীও বেশি। সময়সূচিতে পরিবর্তন হলেও সব ট্রেনই চলছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিভিন্নস্থানে ট্রেনের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় কমানো হচ্ছে। এ কারণে সব ট্রেনের শিডিউল ধরে রাখা যাচ্ছে না।
কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধ শুরুর পর প্রায় ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ট্রেনের যাত্রী। কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৪৭টি আন্তঃনগর ট্রেন ও মেইল ট্রেন ছাড়ে। এসব ট্রেনে কমলাপুর ও বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৩২ হাজার আসন রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যাতায়াত করে প্রায় ৪৭ হাজার। এ সংখ্যা এখন ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন মাস্টার নৃপেন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, রাতে বাস না থাকায় রাতে ট্রেনে যাত্রীর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রা নিরাপদ করতে ধীরগতিতে ট্রেন চলায় শিডিউলের বিপর্যয় ঘটছে। দূরের জেলার অধিকাংশ ট্রেন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের বৃহস্পতিবারে শিডিউলে দেখা গেছে, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, রাজশাহীগামী সিল্কসিটির নির্ধারিত সময় দুপুর ২টা ৪০মিনিটে থাকলেও ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে বেলা সাড়ে ৩টায়, বেলা ৪টা ২০মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলীর। তবে ট্রেনটির ছাড়ার সময় লেখা ছিলো রাত ৯টা ৩০ মিনিট।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫