ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শনিবার `সুন্দরবন দিবস’

বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫
বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসুন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও `সুন্দরবন দিবস’।

বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সুন্দরবন একাডেমি ও বন বিভাগের আয়োজনে এবারের ১৪ তম সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সকাল সাড়ে নয়টায়।



ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং হেড অব ডেলিগেশন, বাংলাদেশ মি. পিয়েরি মায়োদোঁ সুন্দরবন দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন খুলনা-২ আসনের এমপি মিজানুর  রহমান মিজান, কেসিসি মেয়র মো. মনিরুজ্জামান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, কেএমপি কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি এবং সুন্দরবন সমর্থক কমিটি, বাংলাদেশের কনভেনর ও খুলনা বিভাগীয় প্রেসক্লাব ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন লিয়াকত আলী।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ক্রেল-এর চিফ অব পার্টি ড্যারেল ডেপার্ট, রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর (এ্যাকটিং) জন কিলকেনি এবং ইউএসএইড বাঘ এ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি প্রকাশ কান্ত সিলওয়াল।

খুলনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন  উপজেলা যেমন মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, শ্যামনগর, আশাশুনিতে স্থানীয় বনবিভাগ, প্রেসক্লাব ও অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে সুন্দরবন দিবসের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার, কর্মশালা, সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি।

শুক্রবার সুন্দরবন একাডেমীর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, আমরা যারা সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার মানুষ, তাদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সাম্প্রতিককালে ২০০৭ ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় স্বাক্ষ্য দেয় যে, সুন্দরবন পরম মাতৃস্নেহে আমাদের আগলে রেখেছিল বলেই আমরা খুবই কম ধ্বংসের শিকার হয়েছি। এ প্রমাণ শুধুই এবারের নয় এটা শতাব্দি থেকে শতাব্দি পর্যন্ত একই ধারায় চলে আসছে। আমরা সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি করলেও সুন্দরবন সব সময় শুধুই দিয়ে গেছে বিনিময়ে সে পায়নি কিছুই। আমরা বলতে চাই যারা বুঝে বা না বুঝে সুন্দরবনের ক্ষতিসাধন করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এখনই সে সময় সুন্দরবনের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। কারণ আমাদের নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সুন্দরবন বেঁচে থাকলে সুন্দরবনও বাঁচিয়ে রাখবে আমাদের, মায়ের মতই পরম আদরে।

তিনি জানান, তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়।

এগুলো হচ্ছে-জাতীয় বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের গুরুত্ব এবং ভূমিকা সর্ম্পকে সর্বমহলে ব্যাপক সচেতনতা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করা, যাতে এটি সংরক্ষণের কাজ শক্তিশালী হয়, বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন সংরক্ষণে বনবিভাগ ও বেসরকারি উদ্যোগসমূহকে সহায়তা করা ও সুন্দরবনের প্রতি নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালবাসা ও মমত্ববোধ তৈরি করা এবং তাদের চেতনায় সুন্দরবন ভাবনাকে উজ্জীবিত করা। তবে এই প্রধান তিন উদ্দেশ্যের বাইরেও সুনির্দিষ্টভাবে বেশকিছু উদ্দেশ্যাবলী রয়েছে এই দিবস পালনের নেপথ্যে।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। বিশ্ব সম্পদ। এই সম্পদের অধিকারী হওয়াতে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে সুন্দরবন আগলে রেখেছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক বিরাট এলাকা সুন্দরবনকে অবলম্বন করে নিরাপদ রয়েছে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থা।

দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক-সামাজিক অবস্থাও সুন্দরবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন প্রবাহের সঙ্গে সুন্দরবন আবর্তিত আবহমান কাল থেকে। এ কারণে সুন্দরবনের ভাল-মন্দ, দুঃখ-বেদনা দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে নাড়া দেয় প্রচণ্ডভাবে। এ অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে সুন্দরবনের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এজন্য সুন্দরবনকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে অনাদিকাল পর্যন্ত। আগামী প্রজন্মের জন্য  হলেও সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে হবে। রক্ষা করতে হবে এর জীববৈচিত্র্য-প্রাণবৈচিত্র্যকে।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক কারণসহ মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের স্বাভাবিক অস্তিত্ব আজ অনেকটাই  বিপন্ন। সুদীর্ঘকাল থেকেই এধারা চলে আসলেও বর্তমানে তা বিপজ্জনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে।   এমনি একটি উপলব্ধি বোধ থেকেই ২০০১ সালে সুন্দরবন অঞ্চলের কিছু মানুষ সংগঠিত হয় সুন্দরবন সুরক্ষার আন্দোলনে। এই আন্দোলনেরই অংশ হিসেবে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ এই সম্মেলনের উদ্বোধন করে সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকারের পক্ষে ঐক্যমত পোষণ করেন।

২০০১ সালের সুন্দরবন সুরক্ষার জনআন্দোলনের হাত ধরে সুন্দরবন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয়ে জন্মলাভ করে সুন্দরবন একাডেমি। পরবর্তীকালে সুন্দরবন একাডেমির হাত ধরে সুন্দরবন সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা আন্দোলনে রূপ দেওয়ার উদ্দেশে শুরু হয় সুন্দরবন দিবস পালনের  উদ্যোগ।

এই উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতায় এখন প্রতিবছর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, নড়াইলসহ আশপাশের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে উদযাপিত হয় সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবন অঞ্চলে সুন্দরবন দিবস এখন অন্যতম প্রধান উৎসবে পরিণত হয়েছে।

ফারুক আহমেদ আরো বলেন, সার্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন বিষয়ে জাতীয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মহলে একটি ঐকমত্য রয়েছে। এই ঐকমত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলেও সরকারকে সুন্দরবনের জন্য বছরের একটি দিনকে বরাদ্দ দিতে হবে এবং সেটি হতে হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। কারণ সুন্দরবনের কাছের মানুষ যারা সুন্দরবনকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায় সেসব সুন্দরবন প্রেমি প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করেছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। সুতরাং  বেসরকারি এই উদ্যোগেকে সম্মান জানাতে হলেও সরকারিভাবে ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।