ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

তারা তিনজন

ওয়ালিউর রশীদ তমাল, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
তারা তিনজন

ঢাকা: ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রফিক, বরকত, সালাম ও জব্বারসহ এ মাটির অকুতোভয় সন্তানদের রক্তে অর্জিত হয় বাংলা ভাষা। তবে ভাষার জন্য আমাদের ভালোবাসার গল্প এখানেই শেষ নয়।



এরপরও কখনো গান, কখনো নকশা আবার কখনো লড়াইয়ে একুশের চেতনায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

একুশের এ প্রহরে সেইসব লড়াকুদের মধ্য থেকে তুলে ধরা হলো তিনজনের কথা। যাদের সাধনা, মমত্ব আর ত্যাগে আজ আমরা গাইছি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ আর আজকের এ দিন পেলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা।

তারা তিনজন হলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, হামিদুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম।

অবশ্য, একটি বিষয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মিলও রয়েছে এ তিনজনের জীবনে। গান, স্মৃতির মিনার ও স্বীকৃতির দাবি আদায়ে অনন্য ভূমিকা রাখা এ ত্রয়ীর জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়েছে পরবাসে।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী, যিনি দীর্ঘদিন লন্ডনে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, আবদুল গাফফার চৌধুরী ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ সালে বরিশাল জেলার এক জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্ম নেন। তারপর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি পাড়ি জমান টেমস নদীর তীরে।

১৯৭৬ সাল থেকে ‘বাংলার ডাক’, ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’, ‘নতুন দিন’, ‘নতুন দেশ’ ও ‘পূর্বদেশ’ নামে বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেন তিনি।

প্রবাসে থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় এখনও নিয়মিত লেখেন গাফফার চৌধুরী।

আমাদের জাতীয় শহীদ মিনারের মূল নকশাবিদ হামিদুর রহমানও ছিলেন কানাডার অভিবাসী।

হামিদুর রহমানের জন্ম ১৯২৮ সালে আর মৃত্যু ১৯৮৮ সালের ১৯ নভেম্বর। গণমাধ্যমে চিত্রশিল্পী হলেও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবেই সমধিক পরিচিত মন্ট্রিয়লে দীর্ঘদিন বাস করা এ নিভৃতচারী শিল্পী।

হামিদুর রহমান ১৯২৮ সালে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে জন্ম নেন। তার পিতা মির্জা ফকির মোহাম্মদ ও পিতামহ মির্জা আবদুল কাদের সরদার। ঢাকা আর্টস স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে চিত্রকলার উপর প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যান।

প্যারিসের ইকোল দ্য বোজ আর্টস থেকে শিক্ষা লাভের পর লন্ডনের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে এলেও ফের ১৯৫৮ সালে তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।

১৯৫৯-১৯৬০ পর্যন্ত তিনি পেনসিলভিয়া অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে চিত্রকলা বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, হামিদুর রহমানের রূপকল্পনা অনুসারেই ১৯৬২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয় নতুন শহীদ মিনার।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলামও কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাপরিচালক কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে রফিকুল ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রস্তাব করেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সেসময় এ চিঠিটি মহাপরিচালকের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে।

তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন।

সেই পরামর্শ অনুযায়ী রফিকুল ইসলাম তার সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে সঙ্গে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। আর সেই সংগঠনের প্রচেষ্টার ফসল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এনে দেওয়া রফিকুল ইসলাম কুমিল্লার ছেলে। ১৯৫৩ সালের ১১ এপ্রিল তিনি জন্ম নেন কুমিল্লা শহরের উজিরদীঘির পাড় এলাকায়। পিতা আবদুল গণি ও মাতা করিমুন্নেসা।

স্থানীয় হরেকৃষ্ণ স্কুলেই শুরু তার শিক্ষাজীবন। ১৯৫৮ সালে কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে পাশ করেন মেট্টিক। এরপর এইচএসসি ও ডিগ্রি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে।

রফিকুল ইসলাম একাত্তরে ২নং সেক্টরে মুজিব বাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেন।

সেসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সম্মুখযুদ্ধে তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সাফু শহীদ হন।

১৯৯৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমানো একুশের চেতনাদৃপ্ত এ প্রবাসী বাঙালি ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর কানাডার ভ্যাঙ্কুভার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।