ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

২১ এলেই শুধু রফিককে মনে পড়ে

খন্দকার সুজন হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
২১ এলেই শুধু রফিককে মনে পড়ে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকগঞ্জ: সারা বছর এ বাড়ির কেউ খবর নেয় না। কেবল ভাষার মাস আসলেই আমাদের কথা মনে পড়ে।

এ মাসের শুরু থেকেই সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজনের দেখা মেলে। তাই এ মাস আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানান ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের ভাবী গুলেনুর বেগম।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে শহীদ রফিকের পৈত্রিক ভিটায় গিয়ে জানা যায় রফিককে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ ও প্রত্যাশার কথা। এখন এ বাড়িতে রফিকের ভাবী তার একমাত্র ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে বাস করছেন।

রফিক উদ্দিন আহমদের গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করতেই রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন গাছ ও বাড়ির গেটের সামনে টাঙানো ২১ নিয়ে ফেস্টুন ও ব্যানার।

এছাড়া প্রবেশ পথেই এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্মিত ছোট্ট শহীদ মিনার। যেখানে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রফিকের পরিবারের সদস্যরা।

বাড়িতে রয়েছে দুটি ঘর। ২০০০ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার সহায়তায় নির্মিত হয় এ দুটি ঘর। একটি ব্যবহৃত হয় পাঠাগার হিসেবে আর অপরটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন রফিকের ভাবী।

ভাষা শহীদ রফিকের ভাবী বলেন, সারা বছরের মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটাই তাদের কাছে অনেক আনন্দের। এ আনন্দ অন্য রকমের। এ মাসের শুরুতেই দেশের বড় বড় সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা আমাদের খোঁজখবর নেয়।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের একটা দাবি ছিলো। সেটি হলো শহীদ রফিকের পিতৃভূমিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের। এ উদ্দেশে বাড়ির দক্ষিণ পাশে তিন শতাংশ জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

গুলেনুর বেগম বলেন, বয়সও শেষের দিকে। তাই এখন আমার একটাই স্বপ্ন। মরার আগে যেন এই শহীদ মিনার দেখে যেতে পারি।

তিনি জানান, ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিনের বাড়ি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন আসেন। এতে যেমন অনেক আনন্দ হয় আবার কষ্টও হয়। কারণ পারিবারিক অবস্থার কারণে দর্শনার্থীদের তেমন কোনো আপ্যায়ন করতে পারিনা। এমনকি একসঙ্গে বেশি লোক আসলে তাদের বসার ব্যবস্থা করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।

১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর পারিল গ্রামে জন্ম রফিক উদ্দিন আহমদের। বাবা আবদুল লতিফ ও মা রাফিজা খাতুনের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রফিক ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ সন্তানকে। ২০০৮ সালে তার গ্রামের বাড়ির পাশে নির্মিত হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

এছাড়া শহীদ রফিকের জন্মস্থান পারিল গ্রামের নাম পরির্বতন করে রাখা হয় রফিকনগর। তার স্মরণে  সিংগাইর-হেমায়েতপুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত হয় ভাষা শহীদ রফিক সেতু।

এসব বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিকের অবদানের জন্যে আমরা গর্বিত। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া ভাষা দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জে তিন দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।