বগুড়া: একদিকে হরতাল অন্যদিকে যানবাহনের ব্যাপক যানজট। দুইয়ে মিলে শহর জীবন অতীষ্ট হয়ে ওঠেছে।
হরতালের নাশকতা ও শহরে যানজট সামাল দিতে ব্যস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ট্রাফিক পুলিশরা।
সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে হরতালের মধ্যেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বগুড়া জেলা শহরসহ সকল উপজেলায়।
চলমান হরতালে দিন-রাতে সমান ভাবে বগুড়া শহরে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের সেরা যানজট।
কেউ এটাকে দেখছে রাজনৈতিক অবক্ষয়সহ দ্বন্দ্বের জের হিসেবে, কেউ দেখছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ব্যর্থ আন্দোলনের ফসল, কেউ দেখছেন সন্ত্রাস ও নাশকতা বিরুদ্ধের প্রতিবাদ হিসেবে, আবার কেউ বলছেন ২০ দলীয় জোটের এমন ধ্বসাত্মক কর্মসূচির কারণে ট্রাফিক পুলিশ বা সার্জেন্টদের বাড়তি সুযোগ গ্রহণ।
তবে সব মিলিয়ে যানজটে নাকাল বগুড়ার আপামর জনসাধারণ এতে কারও দ্বিমত পাওয়া যায়নি।
থানা রোডের সজল সু-স্টোরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মটর শ্রমিকদের দৌরাত্ম তো আছেই। পুরো শহরের ভেতরে সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশাসহ যে কোনো ধরনের গাড়ি যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা ও পার্কিং করছে।
এরপর বিএনপি-জামায়াত হরতাল ডাকায় কিছুটা ইচ্ছে করেই হয়তো পুলিশ যানজট ঠেকাতে কোনো রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা।
নাম প্রকাশে তিন ট্রাফিক সদস্য জানিয়েছেন, উপরের নির্দেশ রয়েছে যানজট পরিস্কার করা যাবেনা। কারণ যানজট না থাকলে হরতাল পালিত হচ্ছে মনে হতে পারে, তাই যানজট নিরসনে কার্যকরী উদ্দ্যোগ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করলেও এ নিয়ে পরিস্কার কোন বক্তব্য দেয়নি জেলা পুলিশ।
৫ জানুয়ারির পর ৪/৫ দিন শহরে যানবাহন কিছুটা কম দেখা গেলেও এরপর থেকে এতটাই যানবাহন মানুষের আগমন, যা ধারণার বাইরে। ঝুঁকি কিছুটা থাকলেও বকেয়া ও পুরাতন কাজগুলো পুষিয়ে নিতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক বগুড়ায় এসে কাজ করছে। ফলে ১০ জানুয়ারীর পর থেকেই বলা চলে হরতাল একেবারে শুধু ঢিলেঢালা বললে ভূল হবে, বরং কোন রকম হরতালের চিহ্নই দেখা যায়নি।
মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা, মানববন্ধন, স্মারকলিপি, গণসংযোগ কিছুই নেই ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দোহাই দিয়ে মাঠ ছেড়ে ঘরে উঠেছে বিএনপি'র সুবিধাবাদী প্রায় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মাঠে অবস্থান না নিয়ে ঘরে বসে লুকিয়ে থেকে কাগজে বিবৃতি দিয়ে হরতাল পালনের কথা বলছেন তারা। যে কারণে হরতাল পালনের প্রশ্নই এখন আর ওঠেনা। যেটুকু দেখা যায়, তা হলো জঙ্গীবাদ ও নাশকতা।
তবে একথাও সত্য, হরতাল হোক বা না হোক এমন যানজট শহরবাসীর কাম্য নয়। শহরের শেরপুর রোড ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে বগুড়ার কেন্দ্রস্থল সাতমাথা পায়ে হেটে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের পথ। সেখানে রিক্সা ও মোটরসাইকেলসহ যেকোন ধরনের যানবাহনে আসতে সময় লাগছে এখন ২০ থেকে ২৫ মিনিট। আবার একই ভাবে সাতমাথা থেকে বড়গোলা মোড়ের পায়ে হেটে যেতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ মিনিট। সেখানে যেকোন বাহনে যেতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত।
যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষই এই যানজটের কবলে পড়ে নানা রকম কষ্টের শিকার হচ্ছেন। ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ও সময়। যানজট পেরিয়ে শিশু ও বয়স্কসহ রোগীদের সাতমাথা পেরুনো অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় মতো ক্লিনিক ও হাসপাতালে পৌছাতে না পেরে অনেককে মূল্য দিতে হয়েছে চরম।
ইউনুস আলী নামের একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, কাগজ-কলমের মধ্যে হরতাল কর্মসূচি সীমাবদ্ধ থাকায় কিছুটা হলেও বিরক্ত হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ চায় যেকোন সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত। এমন অর্থহীন হরতালও যেমন চাননা, তেমনি অনাকাঙ্খিত অসহনীয় এমন যানজটও চাননা।
বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সার্জেন্ট বিকর্ণ কুমার বাংলানিউজকে জানান, আসলে হরতাল-অবরোধের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই মূলত: যানজটের কবলে পড়েছে মানুষ। খুব শিগগিরিই এর একটা ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫