ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হরতাল-অবরোধ পায়ে ঠেলে কর্মচঞ্চল ময়মনসিংহের বাজার

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
হরতাল-অবরোধ পায়ে ঠেলে কর্মচঞ্চল ময়মনসিংহের বাজার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ শহরের ছোট বাজার এলাকা। বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা।

এ সড়কের দু’পাশে অন্তত ৩০টি ট্রাক দাঁড়ানো।

সারি সারি ট্রাকে ভোগ্যপণ্য তোলায় ব্যস্ত শ্রমিকেরা। সড়কপথে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ট্রাক চলে যাচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে।

গত এক সপ্তাহে হরতাল-অবরোধ পায়ে ঠেলে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে শহরের ছোট বাজার ও বড় বাজার এলাকা। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আতঙ্ক কাটিয়ে নব উদ্যমে আবারো দূর-দূরান্ত থেকে এ দুই বাজারে বেড়েছে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা।

ফলে ট্রাক চালক, শ্রমিক ও ট্রান্সপোর্ট মালিকদের মাঝে স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা এ দুই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্য পরিবহনের এমন দৃশ্য।   

জানা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে ময়মনসিংহে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। ভোগ্যপণ্য ডেলিভারিতেও নেমে এসেছিল শ্লথগতি। শুধু নিরাপত্তার অভাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চালানও ঠিক গতিতে পৌঁছানো যাচ্ছিলো না।

শহরের ছোট বাজার এলাকায় স্বস্তি নিয়ে নিজের ট্রাকের পাশে দাঁড়ানো চালক কামরুল হাসান বলেন, হরতাল-অবরোধে একেবারে পথে বইস্যা গেছিলাম। গত কয়দিনে পরিস্থিতি অনেক উন্নতি হইছে। কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও ঠিকমতো পণ্যবাহী ট্রাক গন্তব্যে নিয়ে যাইতে পারতাছি।

একই রকম ভাষ্য ট্রাক চালক মোফাজ্জলের (৪০)। তিনি জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা শহরের ছোট বাজার ও বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার বাজারে নিয়ে যান। চলমান অস্থিরতায় তাদের ব্যবসা লাটে উঠেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে সেই অবস্থা কেটে গেছে।

মেসার্স মুক্তা ট্রান্সপোর্টের স্বত্ত্বাধিকারী ও জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সাদেকুর রহমান জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রায় ৪৩টি ট্রান্সপোর্ট থেকে লাচ্ছা সেমাই, ভূষি, ময়দা, চিনি, ডাল, সুজি, আটাসহ প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক ভোগ্যপণবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করতো। মাঝখানে এ সংখ্যাটা একেবারে কমে এসেছিল।

তখন দূর-দূরান্ত থেকে পার্টিরা (ব্যবসায়ীরা) আসতো না। এখন ভয় কমছে। গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। রাস্তাঘাটে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। রাজনীতির গরম সময়ের মধ্যেও মোটামুটি পণ্য পরিবহন হয়েছে, জানান তিনি।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় এতোদিন ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবির হয়ে পড়ায় অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ট্রান্সপোর্ট মালিক। বলেন, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছাড়া সাধারণ দৃষ্টিতে এখন আর হরতাল-অবরোধ নেই। গাড়ি জ্বালাইয়্যা মানুষ পোড়ানোকে আন্দোলন বলে না।

অনেকটাই স্বস্তি শ্রমিকদের মনেও। কথা হয় লেবার সর্দার ইলিম মিয়ার সঙ্গে। ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়িগামী একটি পণ্যবাহী ট্রাকে ভোগ্যপণ্য লোড করছেন তার নেতৃত্বে পাঁচ শ্রমিক।

তিনি বলেন, পিন্ডা খাট্যাইয়া সারা রাইত পরিশ্রম কইরা দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা পাই। কিন্তু হরতাল-অবরোধে এতোদিন কাম ছিল কম। অহন আগের চেয়ে কাম কিছুটা বাড়ছে।

কথার ফাঁকে আরেক শ্রমিক হোসেন আলী বলে উঠলেন, আমগর ময়সিং (ময়মনসিংহ) হরতালে ভাসে না। আমগর এইহানো গেঞ্জাম নাই। সবাই ভাই ভাই। আমরাও ভালো থাকবার চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।