ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আমের ভালো ফলন পেতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
আমের ভালো ফলন পেতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আমের মুকুলের গন্ধে চাষীদের আগাম স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। প্রায় দেড়মাস আগ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে।

এখন প্রায় সব অঞ্চলেই মুকুলে ছেয়ে গেছে আম গাছ।
 
তবে গাছে মুকুল আসার পরপরই চাষীদের দেখা দেয় বিপত্তি। বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হতে শুরু করে আমের মুকুল। আর আমের ভালো ফলন পেতে হলে এসময় আম চাষীদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হয়ে যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি বলে জানান কৃষিবিদরা।
 
আমচাষীরা জানান, এসময় কৃষি কর্মকর্তারা যদি মাঠে গিয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখে পরামর্শ দেন, তাহলে তারা অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচারাল উইং এর গবেষণা কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ স্বদেশ কুমার পাল বাংলানিউজকে জানান, এসময় সবচেয়ে বেশি হপার পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তাই কৃষকদের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ঠিকমতো সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
তিনি বলেন, আম চাষীরা যদি কোনো সমস্যায় পড়েন তাহলে তারা কাছের কোনো কৃষি অফিস অথবা সরকারি হর্টিকালচারাল সেন্টারে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
 
চাপাইনবাবগঞ্জ কানসাট শিবগঞ্জ থানার আমচাষী তোফাউর রহমান বলেন, এখন আমাদের এলাকায় আমের মুকুলের সামনের অংশ পচে যাচ্ছে। এ সমস্যাটা বেশ বড় আকারেই দেখা দিয়েছে।
 
তিনি জানান, আবহাওয়ার উপর আমের রোগ অনেকটা নির্ভর করে। ওই রোগ ছাড়া এখন পর্যন্ত তেমন কোনো বড় রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর তার জানা নেই।
 
আমচাষী তোফাউর রহমানের এ সমস্যার বিষয়ে কৃষিবিদ স্বদেশ কুমার পাল জানান, আমের মুকুল যদি কালো হয়ে পচে যায়, তাহলে এটি অ্যানথ্রাকনোজ রোগ। এসময় এ রোগই বেশি দেখা দেয়।
 
আমের ভালো ফলন যা যা করতে হবে: পরিচর্যা শুরু করতে হবে আমবাগানে মুকুল বের হওয়ার আগেই। তবে গাছে মুকুল আসার পরও সমানতালেই যত্ন নিতে হবে। আমে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক সঠিক মাত্রায়, সময় ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আমের ভালো ফলনের সম্ভবনা বেশি থাকে।

অ্যানথ্রাকনোজ রোগ: আমে মুকুল আসার পর সবচেয়ে বড় যে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে তা হলো, আমের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ। এ রোগ দমনে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত আক্রান্ত গাছে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 
হপার পোকার আক্রমণ: আমের আকার মটরদানার মতো হলে গাছে দুইবার স্প্রে করতে হবে। এসময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগেই একবার ও এর একমাস পর আরও একবার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ১.০ মিলি সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 
আমের অঙ্গ বিকৃতি বা ম্যালফরমেশন: এ রোগ সাধারণত মুকুলে হয়। তবে ডালের আগায়ও হতে পারে। আক্রান্ত মুকুল কালো হয়ে যায় ও মুকুলগুলো একীভূত হয়ে জটলার সৃষ্টি করে। এ রোগের প্রতিকার হচ্ছে, আম ধরার ৮০ থেকে ৯০ দিন আগে ন্যাপথেলিক এসিটিক এসিড স্প্রে করতে হবে ও আক্রান্ত স্থানে কার্বোন্ডাজিম (১ গ্রাম/লিটার পানি) স্প্রে করতে হবে।
 
বোঁটা পচা রোগ: এ রোগ আমের অন্যতম মারাত্মক রোগ। প্রথমে বোঁটার দিকে পচন ধরে, পরে পুরো ফলটি পচে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে। গাছে থাকা অবস্থায় জীবাণু মুক্ত অবস্থায় থাকে, পরে আম সংগ্রহের পর উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখা হলে আক্রান্ত আমের রং বাদামি হয়ে যায়, যা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
এ রোগের প্রতিকার হচ্ছে, প্রায় ২-৩ সে.মি. বোঁটা রেখে আম সংগ্রহ করতে হবে ও ডায়থান এম ৪৫ অথবা বেভিসটিন (০.২%) স্প্রে করতে হবে।
 
পাউডারি মিলডিউ: পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে প্রকাশ পায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষপ্রান্তে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। কচি পাতাতেও রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিতে পারে। হালকা বৃষ্টি, মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ এ রোগের জীবাণুর ব্যাপক উত্পাদনে সহায়তা করে।
 
অনুকূল আবহাওয়ায় এ পাউডার সম্পূর্ণ মুকুলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত মুকুলের সব ফুল নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মুকুলের দণ্ডটি দাঁড়িয়ে থাকে। আক্রমণ মারাত্মক হলে গাছে কোনো ফল ধরে না। তাছাড়া বেশি আক্রান্ত হলে কচি আম ঝরে পড়ে। এ অবস্থায় রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিলেই সালফার বা গন্ধকযুক্ত যেকোনো ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
 
পরগাছা উদ্ভিদ: পরগাছা উদ্ভিদের বীজ আম গাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে। ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে দূর থেকে পরগাছার উপস্থিতি বোঝা যায় না। পরগাছার প্রতিকার পেতে আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্থানে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল-ফল আসার আগেই পরগাছা ছাঁটাই করা উচিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।