ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হরতাল-অবরোধের প্রভাব-৫

অর্ধাহারে-অনাহারে খুলনার নারী শ্রমিকরা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
অর্ধাহারে-অনাহারে খুলনার নারী শ্রমিকরা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে খুলনার নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন। কাজ পাচ্ছেন না দিনমজুর ও শ্রমিকরা।

বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা। দারিদ্র্যে নিমজ্জিত এসব মানুষের জীবন এখন চরম বিপন্নতায়।

খুলনার শ্রম বিক্রির হাট সাতরাস্তার মোড় ও চিংড়ি শিল্প এলাকা রূপসার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

সাতরাস্তার মোড়ে কাজের সন্ধানে আসা কয়েকজন নারী শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে কাজ নেই। কাজ না থাকায় আয়ও নেই। আয় না থাকায় চুলা জ্বলে না। এর ফলে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, তারা তো কোনো রাজনীতি করেন না। কাজ করে খান। তবে তাদের জীবিকা বন্ধ করে এ কোন রাজনীতি? ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বন্দ্বের রাজনীতির আগুনে তারা কেন অভুক্ত থাকবেন।
 
নির্মাণ শ্রমিক আয়েশা খাতুন বলেন, অবরোধ-হরতালে আমাগো আয় রোজগার নেই।

তিনি বলেন, অবরোধের আগের দিন পর্যন্তও সব ঠিকই ছিল। এর পর থেকেই নামে সংসারে দুর্দশা। কেননা হরতাল-অবরোধে বেশির ভাগ সময়েই কাজ বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে কাজ হলে তা দিয়ে সংসার চলে না।  

সাত রাস্তার মোড়ে শ্রমিক নিতে আসা নিরালা এলাকার লিটন হাওলাদার জানান, অবরোধের কারণে ইট-বালু আনতে পারছেন না। ভাড়াও বেড়েছে অনেক। তাই তার বাড়ির কাজের জন্য কয়েকজন শ্রমিক নিতে এসেছেন। অবরোধ শেষ হলে কাজের গতি বাড়াবেন। তখন শ্রমিকও বেশি লাগবে।

চিংড়ি শিল্প এলাকার রূপসায় কর্মহীন বিবর্ণ চেহারার পারুল বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি জানান, চিংড়ি মাছের ঘরে কাজ করে তিনি মজুরি পেতেন দৈনিক ১৫০ টাকা। হরতাল-অবরোধে মাছ ঘরে মাছ আসা কমে যাওয়ায় এখন আয় হয় ৫০ টাকা। যা দিয়ে অসুস্থ স্বামী ও বাচ্চাদের ঠিক মতো খেতে দিতে পারছেন না তিনি।

পারুল জানান, তার মতো অনেক নারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মাছ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে রোজগারের পথ।

টানা তিন দিন কোনো কাজ পাননি জানিয়ে একই এলাকার চাতাল শ্রমিক নাজমা বলেন, চর রূপসা এলাকার একটি বস্তিতে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার। কোনো সঞ্চয় নেই। হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। যে দিন কাজ পাই সেদিন চুলায় আগুন জ্বলে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁয় কর্মরত নারী শ্রমিকের উপরও। অবরোধে সুন্দরবনে পর্যটক কমে যাওয়ায় হোটেল ও গেস্ট হাউজে খণ্ডকালীন কাজ নেই। এছাড়া যারা কাজে ছিলো তাদের অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে।  

কর্মহীন এসব নারীর সামাজিক অবস্থা এমন যে, সহসা ভিক্ষার মতো পেশায়ও নামতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় এনজিও ও মহাজনের চক্রবৃদ্ধি ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন তারা।

চিংড়ি শিল্প এলাকার রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, রূপসা চিংড়ি শিল্প অঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি হাজার হাজার নারী কাজ করেন। বর্তমানে হরতাল-অবরোধে মাছ ঘরগুলো ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোতে মাছ না থাকায় এসব নারী শ্রমিকদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব শ্রমিকদের কাজ নেই, মজুরি নেই। ফলে তাদের সংসারে নেমে এসেছে অর্থকষ্ট।

তিনি গরিব মানুষের আয়ের পথ বন্ধ ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপিসহ ২০ দলের প্রতি আহবান জানান।

নারী মুক্তি সংস্থার সভানেত্রী লিভানা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে পুরুষরা ঝুঁকি নিয়ে কাজে নামতে পারেন। কিন্তু নারী শ্রমিকরা তা পারে না। একে তো হরতাল-অবরোধে কাজ কম, তার উপর নারী শ্রমিকরা ককটেল, পেট্রোলবোমার ভয়ে কাজে নামছেন না।

তিনি জানান, আয়ের উপায় না থাকায় গরিব এসব নারী শ্রমিক সংসার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। হাতে নেই নগদ টাকা, নেই পেটে ভাত। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে আছে। অথচ বাজারে জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় রোজকার আয়ে খাদ্য সংগ্রহ পদ্ধতিতে সংসার চালানো নিম্নবিত্তরা চরম বিপদে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময় :  ০৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।