ঢাকা: গত ২০ বছরে (১৯৯৪-২০১৪) দেশে ৬শ ৬১টি লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পিনাক-৬, মেঘনায় লঞ্চ দুর্ঘটনা এবং সম্প্রতি দৌলতদিয়া পাটুরিয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনাও রয়েছে।
এ সব তথ্য প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
শনিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কলাবাগানে পবার কার্যালয়ে ‘নৌনিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা শীর্ষক আলোচনা’ সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন- পবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পদক ও বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক সচিব সৈয়দ মনোয়ার হোসেন। ধারণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।
ধারণাপত্রে বলা হয়, গত ২০ বছরে শুধুমাত্র লঞ্চ দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ হাজার সাতশ ৮০ জন। এ সব দুর্ঘটনায় এখনো কারো শাস্তিও হয়নি।
সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ক্যাপ্টেন রফিক উল্লাহ বলেন, নৌদুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে একমাত্র কার্যকরী ব্যবস্থা হলো নৌযান চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
সংবাদমাধ্যমের পরিসংখ্যান তুলে ধরে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুজাহেরুল হক বলেন, ১৯৭৬-২০০৫ পর্যন্ত যতগুলো নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ৭০ শতাংশই ছিল লঞ্চের ত্রুটিপূর্ণ নকশার (Faulty Design) কারণে।
এ সব দুর্ঘটনার পর এ পর্যন্ত পাঁচশটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটির মাত্র চারটি প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখই দেখেনি।
তিনি বলেন, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার নৌযান চলাচল করছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার নৌযানের সনদ রয়েছে। বাকিদের কোনো সনদ নেই। অথচ এগুলো দেখারও কেউ নেই। মাত্র চারজন পরির্দশক রয়েছেন সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের। তাদের দিয়ে চলছে, পরির্দশন কাজ।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, কোনো জাহাজ বা লঞ্চচালকই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সনদ নেন না। অনেকেই ইঞ্জিন না চালিয়েও জাহাজচালক হয়ে গেছেন। এ ধরনের অব্যবস্থাপনায় বার বার নৌদুর্ঘটনা ঘটছে।
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করাই এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভায় লিখিতভাবে নৌদুর্ঘটনা রোধে কিছু করণীয় তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ছিল সব নৌযানের ফিটনেস নিশ্চিত করা; নিয়ম মেনে নৌযান চলাচলে বাধ্য করা, দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা; এছাড়া তদন্ত কমিটি গঠনের সময় শুধুমাত্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের না রেখে বিশেষজ্ঞদেরও স্থান দিতে হবে; চালক-মাস্টারদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় পবার সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান তারেক চৌধুরীসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫