ফরিদপুর: ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
শুধু ভবন নয় বিদ্যালয়টিতে টয়লেট, টিউবয়েল, বেঞ্চ, লাইব্রেরী, খেলার মাঠসহ বিদ্যালয়ে অত্যাবশ্যক কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা না থাকায় বিদ্যালয়ের চার শিক্ষিকাসহ প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি টিনসেট ছোট ভবন নির্মাণ করা হলেও, নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হওয়ায় মাত্র ২০ বছরেই ভবনটির দেয়াল, পিলার, দরজা, জানালাসহ টিনের চাল সবই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পারভীন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ভবন না থাকায় ব্রেঞ্চ, টেবিল, ব্ল্যাকবোর্ডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত জায়গায় রাখতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মূল্যবান উপকরণ চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কিছুই করার নেই আমাদের।
খোলা আকাশের নিচে, ধুলো-বালির মধ্যে ক্লাশ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রচন্ড রোদে চরম কষ্ট সহ্য করে খোলা আকাশের নিচেই বাধ্য হয়ে ক্লাস করেছে শিক্ষার্থীরা। আর মাত্র কয়েকদিন পর থেকে বৃষ্টি শুরু হলেই বন্ধ হয়ে যাবে পৌনে দুই’শ শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য কোনো শৌচাগার নেই এই বিদ্যালয়ে। এ কারনে চরম ভোগান্তির মধ্যে অমানবিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকারা। পানি খাওয়ার ব্যবস্থা টুকু পর্যন্ত নেই বিদ্যালয়ে।
তিনি বলেন, তার পরেও সব কষ্ট, সব বাধা উপেক্ষা করে ২০১৫ সালে এ বিদ্যালয়ে ১৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণিতে ৪০জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৫জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৭, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২০জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মুন্নী আক্তার বলেন, সময় মত বই পাওয়ায় পড়াশোনা কোনো রকমে করতে পারলেও টয়লেট না থাকায় চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। মাঝে মধ্যে স্কুলের আশে পাশের বাড়ির টয়লেটে যেতে হয়। বিদ্যালয়ের ভবনসহ টয়লেটটি খুবই প্রয়োজন।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মুস্তাহাব বলেন, শীতের দিন শেষ কোনো রকমে এতদিন ক্লাস করা গেলেও সামনে বৃষ্টির দিনে কোনো দিন ক্লাস হবে কোনো দিন হবে না। পরিবেশের কারণে অনেকেই স্কুলে আসতেও চাইনা।
বিদ্যালয়ের সভাপতি হাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ের এমন বেহাল দশা সম্ভবত বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। তার পরেও সুনামের সঙ্গে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে শুধু এলাকার শিশুদের শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও অভিভাবকদের আন্তরিকতার কারনে। তবে এভাবে আর হয়তো চলা সম্ভব নয়। সামনে ঝড় বৃষ্টির দিনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে রাখা দুরহ ব্যাপার।
তিনি সরকারের কাছে শিশুদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিশেষ বিবেচনায় ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি মান সম্পন্ন ভবন যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণের দাবি জানান।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যা দূর করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যা জানিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মহাসীন মোল্যা বলেন, রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টম্বরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি নগরকান্দার চরযশোরদী ইউনিয়নের রাখালগাছি ও তারাকান্দা গ্রামের একমাত্র এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সমস্যার সমাধান করে দুই গ্রামের প্রায় দুই’শ কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম অব্যহত রাখতে এগিয়ে আসবে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৫